জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : | প্রকাশ: ২ জুন, ২০২৫, ০৫:৪৪ পিএম
জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

ইলিশের প্রজনন, বেড়ে ওঠা ও উৎপাদন বাড়াতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত প্রনোদনার গবাদিপশু (বকনা বাছুর) বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলে ব্যতিত ভিন্ন পেশার মানুষদের মাঝে এসব গবাদিপশু বিতরণ করায় প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত হয়েছেন। ফলে মৎস্যখাত উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগ বিফলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারের সুবিধা বঞ্চিত প্রকৃত জেলেরা এ ঘটনায় সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছেন।

সোমবার (২ জুন) দুপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের হাজিপাড়া গ্রামের খোকন হাওলাদার পেশায় ইজিবাইক চালক। তার ভাইয়ের ছেলে নাজমুল হোসেন গৌরনদী উপজেলা মৎস্য অফিসে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করছেন। সে সুবাদে জেলে না হয়েও জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত গবাদিপশু পেয়েছেন খোকন হাওলাদার। একইভাবে ওই গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী কালাচাঁন রায়, কৃষক ছালাম প্যাদাসহ নানান শ্রেনী ও পেশার মানুষ জেলে না হয়েও জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রনোদনার গবাদিপশু (বকনা বাছুর) পেয়েছেন। যেকারণে প্রকৃত জেলেরা সরকারি বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অসংখ্য জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া মৎস্য অফিসের কর্মচারি নাজমুল হোসেন যাচাই-বাছাই করে তালিকা করেছেন। সেই তালিকা অনুযায়ী সরকারি বরাদ্দের বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়েছে। ওই কর্মচারি ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে জেলে নয়, এমন তাদের নিকট আত্মীয়-স্বজনদের নাম অর্ন্তভূক্তি করায় প্রকৃত জেলেরা সরকারি বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১২শ’ নিবন্ধিত জেলে কার্ড রয়েছে। এসব কার্ড বেশিরভাগই রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং মৎস্য অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মচারিদের যোগসাজসে ভিন্ন পেশার মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। ফলে সরকারের প্রনোদনার সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত জেলেরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক ইউপি সদস্য অভিযোগ করে বলেন, তার ওয়ার্ড থেকে বাছুর বিতরণের নামে দুইজনের কাছ থেকে নাজমুল হোসেন ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলো। বিষয়টি জানতে পেরে আমি মৎস্য কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দেশীয় প্রজাতীর মৎস্য ও শামুক সংরক্ষণ প্রকল্পের মাঠ সহায়ক কর্মী নাজমুল হোসেন বলেন, যাদেরকে বাছুর দেওয়া হয়েছে তারা প্রকৃত জেলে। ঘুষের টাকা ফেরতের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। গৌরনদী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ দেবনাথ বলেন, তালিকা প্রণয়নের সময় আমি ষ্টেশনে ছিলাম না। জেলে ব্যতিত অন্য কেউ বাছুর পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরও বলেন, বাছুর দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক ইউপি সদস্য আমাকে অবগত করেন। পরবর্তীতে সুবিধাভোগীর কাছে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম এবং প্রাথমিকভাবে তাকে (নাজমুল) সতর্ক করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে সদ্য যোগদান করা গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিফাত আর মৌরি বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ ও শামুক সংরক্ষণ এবং উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মৎস্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ঠিকাদারের মাধ্যমে বকনা বাছুরগুলো ক্রয় করা হয়েছে। প্রথমপর্যায়ে গৌরনদী আনা ৬৫টি বকনা বাছুর ওজনে কম এবং রুগ্ন হওয়ায় গত ২১ মে তা জেলেদের মাঝে বিতরণ না করে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সঠিক নিয়মে বাছুর ক্রয় করে আনার পর গত ২৮ মে তা উপজেলার ৬৫ জন জেলের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেলে নয় এমন ব্যক্তিদের নাম বকনা বাছুর বিতরণের তালিকায় রাখা এবং ভিন্নপেশার মানুষদের নামে জেলে কার্ড থাকার বিষয়ে আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, ইলিশের প্রজনন, বেড়ে ওঠা ও উৎপাদন বাড়াতে প্রতিবছর ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশব্যাপী মাছ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকে। এ সময়ে প্রতিটি নিবন্ধিত জেলে পরিবারকে সরকারি প্রণোদনা হিসেবে চাল বিতরণ করা হয়। কিন্তু জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় নিষেধাজ্ঞার সময়ও অভাবের কারণে তারা নদীতে ইলিশ শিকারে নামেন। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে জেলেদের মাঝে সরকারিভাবে বকনা বাছুর বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে