ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ চলছে, গুরুত্ব পাচ্ছে সাংবিধানিক সংস্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৩ জুন, ২০২৫, ১২:২৩ পিএম
ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ চলছে, গুরুত্ব পাচ্ছে সাংবিধানিক সংস্কার

জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দ্বিতীয় দফার রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সংবিধান সংস্কারসহ বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ের ওপর দলগুলোর অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করতে এ আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বিষয়ভিত্তিক মতবিনিময়ে। রাজধানীর বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল ১১টায় এই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়।

সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, আলোচনাটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। সোমবার বিকেলেই প্রথম ধাপের আলোচনার ধারাবাহিকতায় এই দ্বিতীয় দফার কার্যক্রম শুরু হয়। আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ মোট ৩০টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

গত বছরের অক্টোবর মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই কমিশনগুলো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়। এ রিপোর্টের ভিত্তিতে একটি সর্বসম্মত সংস্কার কাঠামো গড়তে ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

কমিশনটি পুলিশ সংস্কার কমিশন ছাড়া বাকি পাঁচটি কমিশনের ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ছক আকারে দলগুলোর কাছে পাঠায়। এরপর ২০ মার্চ থেকে শুরু হয় প্রথম পর্বের পৃথক আলোচনা, যা চলে ১৯ মে পর্যন্ত। এতে ৩৩টি দলের সঙ্গে মতবিনিময় করে কমিশন। এরপর ২৬ মে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা ও অর্জনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে কমিশন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, ক্ষমতার ভারসাম্যসহ বেশ কিছু সাংবিধানিক বিষয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। অমীমাংসিত গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে:

বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের কাঠামো

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ পদ্ধতি ও মেয়াদ

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন

একই ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন

একজন সংসদ সদস্য কতটি পদে থাকতে পারবেন

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি

সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া

কমিশনের মতে, এসব বিষয়ে এখনো ভিন্নমত থাকলেও অনেক রাজনৈতিক দল আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী এবং নমনীয়তা দেখাচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, “ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব। এর আগে প্রয়োজনীয় নির্বাচনি সংস্কারগুলো চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। কিছু সংস্কার সংবিধান সংশোধন ছাড়াও অফিস আদেশ বা নির্বাহী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কার্যকর করা সম্ভব।”

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “জুন ও মে মাস আবহাওয়াগত কারণে নির্বাচন আয়োজনের জন্য উপযুক্ত নয়। তাই ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে একটি তারিখ নির্ধারণ করা হলে জনগণের মধ্যে যে শঙ্কা আছে তা কেটে যাবে।”

তিনিও জানান, সব দলই প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছে এবং তাঁর নেতৃত্বেই সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা করছে।

ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, ঈদুল আজহার আগে ও পরে ধারাবাহিকভাবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা চলবে। আলোচনার ভিত্তিতে আগামী জুলাই মাসে একটি যৌথ ঘোষণাপত্র— ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে