সাটুরিয়ায় কোরবানির পশুর হাটে সরবরাহ বেশি, লোকসানের আশঙ্কা

এফএনএস (মোঃ মোতালেব হোসেন; সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ) : | প্রকাশ: ৩ জুন, ২০২৫, ০৩:০৩ পিএম
সাটুরিয়ায় কোরবানির পশুর হাটে সরবরাহ বেশি, লোকসানের আশঙ্কা

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সাটুরিয়ার কোরবানির পশুর হাটগুলোতে এবার চাহিদার তুলনায় প্রায় ৯ হাজার অতিরিক্ত পশু উঠেছে। ফলে হাটে পশুর সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে। ইতোমধ্যে সাটুরিয়ার বিভিন্ন পশুর হাট জমে উঠতে শুরু করেছে। যেখানে বেপারীরা কেনার চাইতে ১০-১৫ হাজার টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। যা খামারি ও বিক্রেতাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সাটুরিয়ার বিভিন্ন খামারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে গরু, ছাগল ও ভেড়ার উৎপাদন খরচ গত বছরের তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। খাদ্য, ওষুধ ও শ্রমিকের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই খরচ বেড়েছে। তবে হাটে পশুর সরবরাহ বেশি থাকায় প্রত্যাশিত দাম পাচ্ছেন না তারা।

সাটুরিয়ার হরগজের পশুর হাটে পর পর দুই দিন ঘুরে দেখা গেছে, ৭০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা মূল্যের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশী। দেড় লক্ষ থেকে উপরের পশুর চাহিদা তুলনামুলক কম। বিক্রেতা ও খামারিরা বলছেন, এ বছর ৪-৫ টি গরু নিয়ে আসলে বিক্রি করতে পারছি না। প্রতিটি গরুর দাম ১০-২০ হাজার টাকা কম বলছেন। বাধ্য হয়ে দিন শেষে ট্রাক ভাড়া উঠানোর জন্য ২/১ গরু কম দামে বিক্রি করে বাড়ি যাচ্ছি। ফলে বিক্রেতারা লোকসানের মুখে পড়ছেন।

সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইমরান হোসেন বলেন, এবার কোরবানির জন্য গরু (ষাঁড়, বলদ) ৮ হাজার ৬শত ১ টি এবং ছাগল - ভেড়া ৫ হাজার ৬ শত ১৯টিসহ মোট ১৪ হাজার ২ শত ২০টি লালন পালন করা হয়েছে। আর সাটুরিয়ায় চাহিদা রয়েছে ৯ হাজার ৫টি। আর বেশী থাকছে ৫ হাজার ২ শত ১৫টি পশু।

সাটুরিয়ার হরগজ পশুর হাটে আলিম নামে বেপারী বলেন, আমি ঢাকার সাভার থেকে ৬ টি গরু নিয়ে আসছি। বিকাল পর্যন্ত গরুর দামই বলে না। প্রতিটি গরু কেনার চাইতে ১৫-২০ হাজার টাকা কম বলছে। পরে সব গরু ফেরত নিয়ে যাচিছ। 

গোপালপুর এলাকার আক্কাছ মিয়া বলেন, আমি শখ করে ২ টি ষাঁড় বড় করেছি ঈদকে সামনে রেখে। প্রতিদিন কুড়া, ভুষি ও খাস খাওয়েছি। দুইটা ষাঁড়ে আমি ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা কিনে ৯ মাস পালছি। আমার খরচ ও কেনার দাম বলছে না। 

বরাইদ ইউনিয়নের ধুলুট গ্রামের নিজু মিয়া নামে খামারি বলেন. এ বছর আমি ২০ টি গরু লালন পালন করেছি। এ বছর গরুর হাটে দাম কম।  বাজার না বাড়লে আমার এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা লোকসান হবে।

 রাজৈরের লুৎফর রহমান বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৭ টা ষাঁড় বড় করেছি। যে ষাঁড় খরচ হয়েছে ৯০ হাজার টাকা সে ষাঁড়ের দাম বলছে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকা করে। এভাবে বিক্রি করব কিভাবে। লোন করে এতগুলি ষাঁড় পালছি। আমি বিক্রি করতে না পারলে ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করব। বুঝতে পারছি না।

 গোপালপুর গ্রামের হারুন বলেন এ বছর ৫ টি গরু কোরবানির ঈদে বিক্রি করব বলে আশা করছি। কিন্তু বাজার যে অবস্থা মূলধনই উঠবে না। তবে আশায় আছি ঈদের আগে বৃহস্পতি ও শুক্রবার হাটে উপযুক্ত দাম পাব। 

এদিকে সাটুরিয়ায় অনেক খামারীরা হাটে পশুর দাম থাকায় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করছেন। এখান থেকে অনেক কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে। 

সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইমরান হোসেন বলেন, সাটুরিয়ায় চাহিদার তুলনায় ৫ হাজার ২ শত ১৫টি পশু বেশী পশু রয়েছে। দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর বড় গরুর দাম কম যাচ্ছে হাটে। তবে এক লক্ষ টাকার নিচে গবাাদি পশুর দাম স্বাভাবিক আছে বলে দাবী এই কর্মকর্তার।  আশা করছি ঈদের আগে এ বড় গরুর  দামও বাড়বে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে