হরিণতোয়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির অধিকাংশ এলাকার বেহাল দশার কারণে এলাকাবাসীর ভোগান্তি বেড়েই চলছে। চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বিশাল অংশ এবং ছদাহা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের বিশাল অংশ নিয়ে গঠিত হরিণতোয়া গ্রামটি কেরানিহাট - বান্দরবান সড়কের বায়তুল ইজ্জত হতে শুরু হয়ে পূর্ব ছদাহার কালাপানিয়া শহিদুন্নাল পর্যন্ত বিস্তৃত। গ্রামবাসীর চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এই সড়কের দৈর্ঘ্য ২.৮ কিলোমিটার। এটি এলজিইডির আওতাভূক্ত।এই দীর্ঘ সড়কের চার ভাগের তিন ভাগ এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত। এই অংশে শুকনো মৌসুমেও চলাফেরা কঠিন। সরু, গর্তে ভরা, উঁচু-নীচু এই অংশে বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ী কাঁদা মাটি জমে এখন বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শণে দেখা যায়, বায়তুল ইজ্জত সীমান্তিক সংলগ্ন হরিণতোয়া রাস্তার মাথা হতে হরিণতোয়া পশ্চিম পাড়া বায়তুল হুদা জামে মসজিদ পর্যন্ত সড়কে ইট বিছানো হয়েছে। তবে চলতি বৃষ্টিতে সেই রাস্তার কয়েক জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানির তোড়ে ইট খসে পড়েছে, রাস্তা দেবে গেছে। মসজিদ হতে প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন নয়াখাল পর্যন্ত অংশে ইট বিছানো হয়নি। ফলে সেখানে কাঁদামাটি জমে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নয়াখাল হতে হরিণতোয়া ইসলামীয়া মাদরাসা পর্যন্ত ইট বিছানো হয়েছে। তবে কয়েক জায়গায় দেবে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। ইসলামিয়া মাদরাসার পর হতে কালাপানিয়া পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এই অংশে এখন পায়ে চলাচল পর্যন্ত দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। উভয় পাশের উঁচু জায়গা হতে সড়কে মাটি নেমে এসেছে। বৃষ্টির পানি এবং কাঁদামাটি একাকার হয়ে হাঁটু পর্যন্ত গেড়ে যাবার অবস্থায় উপনীত হয়েছে। এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষক, মৎস্যজীবি ও গবাদী পশু পালনকারী। তারা সাতকানিয়াবাসীর পুষ্টি চাহিদার বড় অংশের যোগান দেয়। কিন্তু নিজেদের চলার পথের করুণ দশার কারণে নিয়মিত ভোগান্তি পোহাচ্ছে। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা নিয়মিত চরম দুর্দশার শিকার হয়। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীকে নিয়ে পড়তে হয় চরম বিপাকে।
হরিণতোয়া গ্রামের কেঁওচিয়া অংশে অবস্থিত ফেরদৌস ভিলার মালিক আলহাজ মাওলানা মোহাম্মদ ফেরদৌস সওদাগর বলেন, "শত বছর ধরে হরিণতোয়া গ্রামটি অবহেলিত। অনেক চেষ্টার পর ব্রীজ নির্মাণ এবং রাস্তার কিছু অংশের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়িত হলেও বিশাল রাস্তা এখনও অকেজো রয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসীর দুর্দশা কমছে না। তবে সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব জনাব মিল্টন বিশ্বাস মহোদয় হরিণতোয়ার সমস্যার কথা অনুধাবন করে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন। এলজিইডির সাতকানিয়া উপজেলা প্রকৌশলী জনাব সবুজ কুমার দে সমগ্র হরিণতোয়া ঘুরে প্রকল্প বরাদ্দের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এখনও নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আশা করি যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন।"
হরিণতোয়া গ্রামের ছদাহা অংশের বাসিন্দা রাসেদুল ইসলাম রাসেল, শহিদ উল্লাহ, জিয়াউর রহমান সওদাগর, নুর উদ্দিন, ছাত্রনেতা শাহাদাত হোছাইন, হাবিবুর রহমান সওদাগর, জামাল উদ্দিন সওদাগর এবং সাইফুর রহমান সানি বলেন, "আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির সংস্কার না হওয়ায় সমগ্র গ্রামবাসী চরম দুর্দশায় নিপতিত। কতৃপক্ষ সদয় হয়ে অতি দ্রুত রাস্তাটির উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করলে গ্রামবাসী আজাব থেকে মুক্তি পাবে।"
এলজিইডি সাতকানিয়া উপজোলা প্রকৌশলী সবুজ কুমার দে বলেন, "রাস্তাটির যে অংশ ভেঙ্গে গেছে তা দ্রুত মেরামত করে দিব। রাস্তার দুই পাশের পুকুরে গাইড ওয়াল হবে। রাস্তার বাকি অংশের ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি আগামী অর্থ বছরে কষ্ট লাঘব হবে।"