রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ছয়জন নিরস্ত্র নাগরিককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় আটজনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজন বর্তমানে পলাতক। তাদের আদালতে হাজির করতে বাংলা ও ইংরেজি দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (৩ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর শহিদুল ইসলাম সরদার। ওইদিন বেলা ১১টায় মামলার চারজন গ্রেপ্তার আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। তারা হলেন—শাহবাগ থানার ওসি (অপারেশন) মো. আরশেদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন এবং মো. নাসিরুল ইসলাম।
পলাতক চার আসামিরা হলেন:
১. ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান
২. সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী
৩. রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম
৪. রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, বুধবার (৪ জুন) একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি দৈনিকে তাদেরকে হাজির হওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। ট্রাইব্যুনাল মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য রবিবার (২২ জুন) দিন ধার্য করেছে।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, বিজ্ঞপ্তি জারির পরও যদি পলাতক আসামিরা হাজির না হন, তাহলে অনুপস্থিতিতেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
গত ৫ আগস্ট চাঁনখারপুল এলাকায় সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডে নিহত হন শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক। প্রসিকিউশনের অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এই নিরস্ত্র তরুণদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়।
দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। তদন্তে উঠে এসেছে, পলাতক চার আসামি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন অথবা তা তত্ত্বাবধান করেছেন এবং তাদের নির্দেশনায় অধীনস্থরা এই হত্যাকাণ্ড চালায়। পরবর্তী সময়ে তারা এ বিষয়ে কোনো জবাবদিহিতার উদ্যোগ নেননি।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, ১৯টি ভিডিওচিত্র, ১১টি সংবাদ প্রতিবেদন, ২টি অডিও, ১১টি বই ও বিশ্লেষণমূলক রিপোর্ট এবং নিহতদের ৬টি মৃত্যু সনদ সংযুক্ত করা হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, গত ২১ এপ্রিল মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে জমা দেয়। এরপর গত ২৫ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেয় এবং মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
এই বিচার বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠনের পর প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে যুক্ত হলো।