বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অভিবাসী ঠেলে পাঠানোর ঘটনা, যা ‘পুশ ইন’ নামে পরিচিত, তা আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ভারত থেকে প্রতিনিয়ত এই ‘পুশ ইন’ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দিল্লিকে পুনরায় চিঠি দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ বিষয়ে কনস্যুলার সংলাপের মাধ্যমেও সমাধানের পথ খুঁজছে ঢাকা।
মঙ্গলবার (৩ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, “পুশ ইন হচ্ছে এবং এটিকে সম্পূর্ণভাবে ঠেকানো সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা চাই, এটি যেন সঠিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী হয়। এজন্য ভারতকে আজ অথবা বুধবার নতুন করে একটি চিঠি পাঠানো হবে।”
সরকারি সূত্র বলছে, ভারত থেকে পুশ ইন বন্ধে এর আগেও পাঁচবার চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব ব্যক্তি অবৈধভাবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাস করছিলেন। তবে বাংলাদেশ বলছে, এমনভাবে ঠেলে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো নাগরিক অবৈধভাবে ভারতে থাকলে তা আইনসম্মত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠানো উচিত।
উল্লেখযোগ্য যে, ভারতের গণমাধ্যমে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের একটি অভিযানের কথা উঠে এসেছে, যার অংশ হিসেবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের পর থেকেই বাংলাদেশে অবৈধ অভিবাসী ঠেলে পাঠানো বেড়েছে। শুধু গত ২৩ দিনেই প্রায় ১ হাজার ২৩৯ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে। এর বাইরে, আরও ২ হাজার ৩৬৯ জনের একটি তালিকা সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ভারতকে পাঠানো নতুন চিঠিতে কিছু পদ্ধতির কথা পুনরায় উল্লেখ থাকবে এবং বিদ্যমান কনস্যুলার ডায়লগ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে বিষয়টি সমাধানে আগ্রহী ঢাকা। তিনি বলেন, “আমরা চাই বিষয়টি নিয়মিত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় হোক, নিয়মের বাইরে না যাক।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ভারতকে একটি চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে এখনো দিল্লি থেকে এর কোনো জবাব আসেনি। এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা দ্বিতীয় চিঠি দেইনি, তবে প্রয়োজন হলে দেব।”
সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনার বিষয়ে সরকার নরম হয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, “সরকারের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা শক্তভাবেই প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছি এবং এ বিষয়ে কখনো নমনীয় হব না। এই ধরনের হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর আর কোনো সীমান্তে দেখা যায় না।”
প্রসঙ্গত, শনিবার (৩১ মে) মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রদীপ বৈদ্য (২২) নামের এক তরুণ নিহত হন।
ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশই কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত এপ্রিলে বাংলাদেশের পণ্য অন্য দেশে পাঠানোর সুবিধা প্রত্যাহার করে। এরপর বাংলাদেশও ১৫ এপ্রিল থেকে স্থলপথে ভারত থেকে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ভারতের ওপর আমাদের নির্ভরতা কমেছে। এখন বিকল্প পথ ব্যবহার করে সিলেট থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট হচ্ছে, পণ্য যাচ্ছে এবং কোনো সমস্যাও হচ্ছে না।”