নগদহীন লেনদেনকে আরও সাশ্রয়ী, সহজ ও নিরাপদ করতে এবার ‘পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার’ (পিএসপি) হিসেবে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেল গ্রামীণ টেলিকমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘সমাধান সার্ভিসেস লিমিটেড’। প্রতিষ্ঠানটিকে ‘সমাধান’ নামের ডিজিটাল ওয়ালেট চালুর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পিএসপি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এটি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের মালিকানাধীন একটি উদ্যোগ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন, ২০২৪’-এর ধারা ৫(৪)-এর ক্ষমতাবলে এই লাইসেন্স দেওয়া হয়। সোমবার (২ জুন) পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট থেকে একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংক, পেমেন্ট প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের কাছে পাঠানো হয়।
‘সমাধান সার্ভিসেস লিমিটেড’ প্রথমবারের মতো পিএসপি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর। প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করে প্রতিষ্ঠানটি অনাপত্তিপত্র (এনওসি) পেতে সক্ষম হলেও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জটিলতায় লাইসেন্স অনুমোদন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের কাছে আবেদনটি পাঠানো হলেও তা অনুমোদন পায়নি। সূত্র জানায়, তখনকার সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব থাকায় আবেদনটি থমকে ছিল।
পরে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে আসেন ড. আহসান এইচ মনসুর। তাঁর নেতৃত্বে আবেদনটি পুনরায় সক্রিয় হয় এবং ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সমাধানকে এনওসি প্রদান করা হয়। অবশেষে ২০২৫ সালের ২ জুন থেকে কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠানটি দেশে ই-ওয়ালেট সেবা প্রদানের জন্য লাইসেন্স পেল।
‘সমাধান সার্ভিসেস লিমিটেড’-এর পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন ৯ জন সদস্য, যাঁরা সবাই গ্রামীণ টেলিকমের মনোনীত। চেয়ারম্যান হয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শাহজাহান, এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন গ্রামীণ টেলিকমের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল হাসান।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ আগস্ট পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ছিলেন ড. ইউনূস। ৯ সেপ্টেম্বর থেকে এই দায়িত্ব পান মো. আশরাফুল হাসান।
পিএসপি মূলত এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে গ্রাহক একটি ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট খুলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ এনে অনলাইন কেনাকাটা, ইউটিলিটি বিল, শিক্ষা ফি পরিশোধসহ বিভিন্ন লেনদেন করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, চীনের আলিপে একটি জনপ্রিয় পিএসপি সেবা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত পিএসপির সংখ্যা ‘সমাধান’-কে যুক্ত করে ৯টিতে দাঁড়াল। এদের মধ্যে রয়েছে আইপে সিস্টেমস, ডি মানি বাংলাদেশ, রিকারশন ফিনটেক প্রভৃতি।
অন্যদিকে, দেশে ১১টি পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর (পিএসও) ও ১৬টি ব্যাংক-ভিত্তিক মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে: বিকাশ (ব্র্যাক ব্যাংক), রকেট (ডাচ্-বাংলা ব্যাংক), উপায় (ইউসিবি), টেলিক্যাশ (সাউথইস্ট ব্যাংক), ওকে (ওয়ান ব্যাংক), মাই ক্যাশ (মার্কেন্টাইল ব্যাংক), প্রাইম ক্যাশ (প্রাইম ব্যাংক), মোবাইল মানি (ট্রাস্ট ব্যাংক), ট্যাপ এন পে (মেঘনা ব্যাংক), শিওর ক্যাশ (রূপালী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, বাংলাদেশ কমার্স, এনসিসি ও যমুনা ব্যাংক)।
দেশের মোবাইল অপারেটর রবি ও বাংলালিংক নিজেদের ডিজিটাল ওয়ালেট চালুর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি জনপ্রিয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজ ও চালডাল ইতোমধ্যে পিএসপি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপকে বিশেষজ্ঞরা ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পথে আরেকটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করছেন। এতে করে বিকল্প আর্থিক প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মের প্রসার ঘটবে এবং গ্রাহকসেবার মান আরও উন্নত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।