ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা আত্মসাদের চেষ্টা

টাঙ্গাইলে ভিজিএফের চাল না পেয়ে ঘুড়ে যাচ্ছে শত শত অসহায় মানুষ

এফএনএস (টাঙ্গাইল) : | প্রকাশ: ৩ জুন, ২০২৫, ০৭:৪৩ পিএম
টাঙ্গাইলে ভিজিএফের চাল না পেয়ে ঘুড়ে যাচ্ছে শত শত অসহায় মানুষ

কৃষ্ণপুর গ্রামের ষাটোর্ধ গৃহবধু হালিমা বেগম। তার উপার্জনক্ষম স্বামী অসুস্থ হওয়ায় কোন রকম চলছে তাদের সংসার। ঈদে একটু ভালো চলার জন্য মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় টাঙ্গাইল সদরের বাঘিল ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফের চালের জন্য এসেছিলেন। বিকেল সোয়া ৪ টা পর্যন্ত অপেক্ষ করেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ভিজিএফের চাল না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাদের গরিবদের হক বড়লোকরা আত্মসাদ করছে। এই সময়েও গরীবরা তাদের হক বুঝে পাচ্ছে না। কার কাছে বললে আমাদের হক বুঝে পাবো।

শুধু হালিমা বেগম নয়, তার মতো শতাধিক অসহায়, দুরিদ্র ও দুস্থ মানুষ ভিজিএফের চাল না পেয়ে ঈদের আগে বুক ভরা হতাশা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। অভিযোগ রয়েছেন, বাঘিল ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সামাউন কবীর স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপি নেতাদের সাথে আতাত করে সরকারি বরাদ্দের ভিজিএফের চাল আত্মসাত করছেন। যাদের নামের তালিকা হয়েছে, তার কেউ চাল পাচ্ছেন না। যারা চাল পাচ্ছেন তারা তালিকার কেউ না। মুখ বন্ধ করতে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ সদস্যরা চাল পাওয়ার কথা না থাকলেও তাদের ৫০ কেজি করে চাল দিচ্ছেন ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এ ছাড়াও ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবগত করেও কোন সুরাহা পাচ্ছে না স্থানীয়রা।

সরেজমিন বিকেল ৪ টায় গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অর্ধশতাধিক অসহায় দরিদ্র মানুষ চালের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। সামনে আগাতে তারা বলেন, স্যার আমার নাম আগে লেখেন। আমরা ৩/৪ ঘন্টা যাবত অপেক্ষা করছি। প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সামাউন কবীর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. মামুন, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবসহ প্রভাবশালীদের নিয়ে তার কক্ষে সভা করছেন। এ সময় সামাউন কবীর এক বান্ডিল টাকা গুনতেও দেখা যায়।

কোনাবাড়ী গ্রামের বৃদ্ধা আমেলা বেগম বলেন, তিন ঘন্টা যাবত ১০ কেজি চালের জন্য অপেক্ষা করছি। গরমে খুবই কষ্ট হচ্ছে। এই চাল আমাদের না দিলে তারা কাদের দিবো।

কৃষ্ণপুর গ্রামের হাসনা বেগম বলেন, আমি খুব অসুস্থ। হাড় ক্ষয় যাওয়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। তারপরও চালের জন্য অপেক্ষা করছি। কাকে বললে আমাদের চাল আমরা পাবো তাও জানি না।

অপরজন মমতা বেগম বলেন, আমার স্বামী না। মানুষের সহযোগিতা নিয়ে সংসার চালাই। আজ সারাদিন যাবত অপেক্ষা করেও চাল পাইনি। আমাদের কথা কেউ শোনে না।

যুগনি গ্রামের ইবাদত আলী বলেন, আমরা দিন মজুর। কয়েক ঘন্টা যাবত অপেক্ষা করেও চাল পাচ্ছি না।

উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মামুন বলেন, এই চাল খাওয়ার যোগ্য না। তাই অনেকেই চাল বিক্রি করে দিচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ভাল চাল সরবরাহ করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিন গ্রাম পুলিশ জানান, তারা প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সামাউন কবীরের সহযোগিতায় ৫০ কেজি করে চাল পেয়েছেন।

প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সামাউন কবীর জানান, ঈদুল আযহায় এই ইউনিয়নের দুই হাজার ১০ জনের মাঝে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। যাদের কার্ড আছে তারাই চাল পাবে। গ্রাম পুলিশরা কোন চাল পাবেন না। বিএনপি নেতা বা প্রভাবশালী কারো সাথে আতাত করা হয়নি। তবে উপকারভোগীদের তালিকা ও কারা চাল উত্তোলন করলো সেই তালিকা দেখাতে পারেননি প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সামাউন কবীর।

তিনি বলেন, নিয়ম মেনেই চাল বিতরণ করা হয়েছে। কোন প্রভাবশালীদের সাথে আতাত করা হযনি।

সদর উপজেলা নির্বাহী নাহিদা আক্তার বলেন, আমি একটি মিটিং আছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে