সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বাধ্যতামূলক করতে উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি উইং) মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, এনআইডি তথ্যের সঙ্গে একাডেমিক তথ্যের অমিল ও আইবাস (একীভূত বাজেট ও হিসাব ব্যবস্থা)-নির্ভর বেতন পরিশোধ ব্যবস্থা ঘিরে উদ্ভূত সমস্যাগুলো নিরসন করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৩ জুন) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, এনআইডি আইনে আগে থেকেই বাধ্যবাধকতা থাকলেও এখনো অনেক সংস্থা তা পুরোপুরি মানছে না। ফলে চাকরিজীবীদের মধ্যে বিশেষ করে সরকারি কর্মচারীদের একটি বড় অংশ বেতনসহ বিভিন্ন সুবিধা পেতে সমস্যায় পড়ছেন।
তিনি জানান, আগে অনেক কর্মচারী ভাউচারের মাধ্যমে বেতন পেতেন। কিন্তু এখন আইবাস ব্যবস্থায় এনআইডির ভিত্তিতে বেতন দেওয়া হচ্ছে। এনআইডির তথ্য সঠিক না থাকলে কারও বেতন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বলা হয়, তাদের কিছু করার নেই, ফলে কর্মচারীরা বাধ্য হয়ে এনআইডি সংশোধনের জন্য কমিশনে ছুটে আসেন। যদিও সব ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া সম্ভব হয় না।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এনআইডি অব্যাহতভাবে উপেক্ষিত হওয়ার পেছনে আইনি কাঠামোর দুর্বলতা থাকায়, এবার বিষয়টিকে জনপ্রশাসন সংক্রান্ত আইনে অন্তর্ভুক্ত করারও সুপারিশ করেছে ইসি। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সোমবার (২ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের ২৭টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। সেখানে ইসির পক্ষ থেকে এনআইডি বাধ্যতামূলক করার পক্ষে আটটি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।
হুমায়ুন কবীর বলেন, "আমরা যাদের এনআইডি সংশোধন করে থাকি, এদের একটি বড় অংশ সরকারি চাকরিজীবী। এনআইডি না থাকলে বা ত্রুটিপূর্ণ হলে, তাদের বেতন-ভাতা, সন্তানদের ভরণ-পোষণসহ সবকিছু ব্যাহত হয়। কোনো কোনো অফিস তো এমনও বলেছে—এনআইডি না ঠিক থাকলে চিরদিনের মতো বেতন বন্ধ হয়ে যাবে।"
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে যেন কোনো সংস্থা এনআইডি ছাড়া নিয়োগ না দেয়, সে জন্য এখন থেকেই সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। জনপ্রশাসনের নিয়ন্ত্রক আইনেও বিষয়টি যুক্ত হলে এনআইডি নিয়ে অবহেলা করার আর সুযোগ থাকবে না।
এছাড়াও মহাপরিচালক জানান, বিদেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে নবম দেশ হিসেবে জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কাজ শুরু হবে আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে।
নিয়োগে স্বচ্ছতা, কর্মচারীদের অধিকার রক্ষা এবং প্রশাসনিক জটিলতা দূর করতে জাতীয় পরিচয়পত্রের বাধ্যতামূলক ব্যবহার সময়োপযোগী একটি সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে এ উদ্যোগ কার্যকর করতে হলে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের আন্তরিকতা ও আইনগত সমন্বয় জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।