সাতকানিয়া উপজেলার দেওদীঘি বাজার শাহী জামে মসজিদকে কেন্দ্র করে কয়েক মাস ধরে চলমান বিরোধের জেরে ঈদ উল আজহার দিনগত রাতে খুনের ঘটনা ঘটেছে। এই খুনের দায়ে চার আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে সাতকানিয়া থানা পুলিশ। নিহতের নাম মোঃ দিদারুল আলম (৫০)। তিনি উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের চার নাম্বার ওয়ার্ডের দেওদীঘি এলাকার ফয়জুর রহমান সওদাগরের বাড়ীর মৃত এজাহার মিয়া ও লায়লা বেগমের পুত্র। খুনের ঘটনায় নিহতের ভাই মোঃ শহিদুল ইসলাম প্রকাশ পঙ্গু শহীদ (৪৩) বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ১০/১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে সাতকানিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে স্থানীয় নুরুল ইসলাম ও শামসুন্নাহারের চার পুত্র যথাক্রমে সরোয়ার আজম (৫১), সাইফুল আজম (৪২), নাজিম উদ্দীন (৩৫) ও নুরুল আজিম বাদশা (৩০) কে গ্রেপ্তার করেছে। বাদীর লিখিত এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রতিপক্ষরা নিহতের পাড়া-প্রতিবেশী। দুই নাম্বার বিবাদী একরাম আলীর পুত্র জসিম উদ্দিন (৫৫) এর সাথে স্থানীয় মসজিদ কমিটির বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত তাদের সাথে বিরোধ চলে আসছে। এজন্য প্রতিপক্ষরা তাদেরকে বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকি দিয়েছে। ৭ জুন শনিবার রাত দশটায় দিদারের পরিবারের সবাই দিদারের চাচাত ভাইয়ের ছেলে সোহেলের বিয়ের বিষয় নিয়ে পারিবারিক বৈঠকে বসে। বৈঠকের সমাপ্তির দিকে রাত ১২ টা ১০ মিনিটের সময় ১ নম্বর বিবাদী মৃত নুরুল ইসলামের পুত্র সরওয়ার আজম (৫১) এর নেতৃত্বে বিবাদীগণ লোহার রড, রাম দা, গাছের বাঠাম, লাঠি - সোটা নিয়ে দিদার - শহিদদের বসতভিটায় প্রবেশ করে সিসি ক্যামেরা ভাংচুর করে। ৩ নম্বর বিবাদী মাহবুবুর রহমানের পুত্র আবু তাহের (৪৮) দিদারকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে। অন্যরাও আক্রমণে অংশ গ্রহণ করে। মূমুর্ষূ অবস্থায় জখমী দিদারকে সাতকানিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, দেওদীঘি শাহী জামে মসজিদ ও কুরবানির বাজারের কতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। উভয় গ্রুপ নিজেদের মত করে কমিটি গঠন, ইমাম - খতীব নিয়োগ, মাদরাসা পরিচালনা ও কুরবানির বাজার পরিচালনার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে তৎপর। মে মাসের শুরুতে খতীব হিসেবে নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে ইন্টারভিউর নিমিত্তে জুমা পড়ানোর জন্য এক গ্রুপ নিয়ে আসে স্থানীয় কওমী আলেম আব্দুল্লাহ আল মারুফকে। অপর গ্রুপ নিয়ে আসে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ কওমী মাদরাসা আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া পটিয়ার একজন শিক্ষককে। কিন্তু কাউকেই মিম্বরে ওঠার বা ইমামতি করার সুযোগ দেয়া হয়নি। নামাজ পড়ান স্থানীয় হেফজখানার একজন শিক্ষক। সার্বিক বিষয় সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসন পর্যন্ত গড়িয়েছে। সম্প্রতি ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালেদ হোসেনের কাছেও এ বিষয়ে এক গ্রুপ ধর্ণা দিয়েছে। তারা গত ২৭ মে ধর্ম উপদেষ্টার গ্রামের বাড়ীতে গিয়ে ওনার সাথে দীর্ঘ আলাপ করেছে। ধর্ম উপদেষ্টা মহোদয় বিষয়টার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ইউএনও মহোদয়কে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তার আলোকে কুরবানীর বাজার হাসিল ফ্রি করা হয় বলে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জাহেদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন। শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রশাসনের চেষ্টার পরও হত্যাকান্ড ঘটিয়ে কলংকের ইতিহাস রচনা করা হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। সাতকানিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ সুদীপ্ত রেজা জয়ন্ত বলেন, খুনের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর - ১। চারজন আসামী গ্রেপ্তার হয়েছে। সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জাহেদুল ইসলাম বলেন, প্রতিপক্ষের হামলায় দিদার নামক একজন নিহতের ঘটনায় চারজন আসামী গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।