খুলনায় গেল বছরের মত এবারও কোরবানি পশুর চামড়ার বাজার মন্দা। সরকার ঘোষিত মূল্যের অনেক কম দামে পশুর চামড়া বিক্রি হয়েছে। বড় গরুর চামড়া প্রতি পিচ বিক্রি হয়েছে ৩শ'-৪শ' টাকায়। আর ছোট গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র দেড়শ'-২শ' টাকায়। ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে নামমাত্র মূল্যে।
এদিকে, চামড়ার দাম কম থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ইয়াতিম খানা-মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা। মূলত: ট্যানারী ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে দাম নিয়ে কোন সমন্বয় না থাকায় এ অবস্থা তৈরি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরের মত এবারও ঈদের দিন শনিবার খুলনার শেখপাড়ার পওয়ার হাউজ মোড়ে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা হয়। ঈদের দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে এই কেনাবেচা। ভ্রাম্যমাণ ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে ওঠে শেখপাড়া পাওয়ার হাউজ মোড়। তবে খুলনা মহানগরীতে স্থায়ী কোন চামড়ার বাজার না থাকায় ক্রেতা বিক্রেতারা প্রতিবছরের মতো এবারও চামড়া কেনাবেচা করেন রাস্তার উপর।
তবে, লবণের মূল্য বৃদ্ধি, নির্ধারিত বাজার না থাকা, ট্যানারির মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা না পাওয়া, পুঁজি সংকটসহ নানা অসুবিধার কারণে শেখপাড়া বাজারের প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়িরা তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা না পাওয়ার কারণেও চাহিদা মতো অনেক ব্যবসায়ী চামড়া কিনতে পারেননি। এমনকি খুলনা অঞ্চলের কয়েকটি ট্যালারি কতৃপক্ষ সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনার ব্যাপারে মূল্য নিয়ে লুকোচুরির কারণেও তারা কাঙ্খিত চামড়া কিনতে পারেননি। এদিকে চামড়া বিক্রেতাদের অভিযোগ, চাহিদার অজুহাত দেখিয়ে সরকারের নির্ধারিত দামের চাইতে অনেক কমদামে চামড়া কিনেছেন চামড়া-ব্যবসায়ীরা।
হাফেজ শফিকুল ইসলাম নামে একজন মাদ্রাসা শিক্ষক বলেন, শেখপাড়ার চামড়া পট্রিতে বিক্রির জন্য বেশ কয়েকটি চামড়া নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু কাংখিত দাম পাইনি। ফলে পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। ছোট গরুর চামড়া দেড়শ' থেকে দুশ' এবং বড় গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৪শ' টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।
চামড়ার প্রকৃত দাম না পাওয়া গেলে ইয়াতিম খানা- মাদ্রাসা চালাতে অসুবিধা হয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
খুলনা মহানগরীর পাওয়ার হাউজ মোড়স্থ চামড়া পোর্টির চামড়া ব্যবসায়ী মো. নুর ইসলাম সরদার বলেন, ঢাকায় নিয়ে চামড়া বাকি বিক্রি করলে দাম বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু বড় পুঁজি নেই তাদের। এ কারণে এ বাজারে নগদ কিনে এখানেই নগদ বিক্রি করে যা সামান্য লাভ হয় তাতেই চলে। ১০ হাজার টাকা লাভের দরকার নেই, ২-১শ টাকা হলেই খুশি। তারা প্রতিটি বড় চামড়া ৪'শ টাকায় কিনে ৫'শ-সাড়ে ৫'শ টাকায় বিক্রি করেন বলেও উল্লেখ করেন।
চামড়া ব্যবসায়ী ভুট্টু সরকার বলেন, খুলনায় এবার সরকারের বেধেঁ দেওয়া দামে কোন চামড়া বেচাকেনা হয়নি। এর পরিবর্তে পছন্দসই দামে চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে বাজারে চামড়ার দাম ছিল না। বিশেষ করে তারা বেশি দামে চামড়া কিনে লাভে বিক্রি করতে পারবেন না। এ কারণে ছোট চামড়া দেড়শ' থেকে ২০০ এবং বড় চামড়া ৪ শ' টাকায় কিনেছেন। তিনি ১শ' পিস চামড়া কিনেছেন বলে জানান।
খুলনা জেলা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মিন্টু ঢালী চরম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ট্যানারী এসোসিয়েশন ও এক্সপোর্ট গুডস এসোসিয়েশনের মধ্যে সরকার ঘোষিত দাম নিয়ে কোন সমন্বয় ছিল না। কোন রেটে ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনবেন সেটি তাদের ব্যাপার উল্লেখ করে ট্যানারী থেকে তাদের জানানো হয়, তাদের নিজস্ব রেটে হলে তারা কিনবেন, অন্যথায় কিনবেন না। এতেই ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্তহানতার মধ্যে পড়েন। এছাড়া খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ টাকা ঢাকার ট্যানারি মালিক ও আড়তদার নিকট বকেয়া রয়েছে। এই ঈদেও তারা কেউ টাকা পরিশোধ করেননি। ফলে, এ বছর চাহিদা মতো চামড়া ক্রয়ের টাকা ছিলনা কারো কাছে। ব্যাংকগুলোও চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয় না। ফলে তারা চাহিদা মতো চামড়া কিনতে পারেননি।
তিনি জানান, খুলনায় চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য স্থায়ী কোনো চামড়ার মার্কেট না থাকার কারণে তারা সড়কের উপর অস্থায়ীভাবে চামড়া কেনাবেচা ও প্রক্রিয়াজাত করতে বাধ্য হন। কিন্তু এবার প্রশাসন রাত ৮টার মধ্যে সকল কাঁচা চামড়া শেখপাড়া এলাকা থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়। যদিও অনেক অনুরোধের পর তারা রাত দশটা পর্যন্ত সময় দেন। এ কারণেও অনেক চামড়া তারা কিনতে পারেননি। তবে সব মিলে এবার সাধারণ ব্যবসায়ীরা ১৮শ'র মত চামড়া কিনেছেন। যা বর্তমানে হরিণটানা এলাকার রূপসী রূপসার গুদামে মজুত করা হচ্ছে। সব মিলে এবার খুলনার চামড়ার বাজার চরম মন্দা গেছে। এতে করে সাধারণ ব্যবসায়ীরা প্রচন্ডভাবে লোকসানের মুখে পড়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।