ভবঘুরেদের নিজ হাতে মাথার চুল ও সেভ করিয়ে, হাত-পায়ের নখ কেটে দিয়ে গোসল করানোর পর নতুন পোশাক পরিয়ে উন্নতমানের খাবার খাইয়ে দিয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স করপোরাল (গানার) কাজী সুজন।
কাজী সুজন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টরকীর কাঁঠালতলী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে ঈদ-উল আযহার ছুটিতে তিনি গ্রামের বাড়িতে এসেছেন। কোরবানীর ঈদের ছুটিতে বাড়িতে বেড়াতে এসেও বসে নেই কাজী সুজন। তার প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক কর্মীদের নিয়ে তিনি ঈদের আগেরদিন (৬ জুন) থেকে শুরু করে গত ৯ জুন পর্যন্ত গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভবঘুরে (মানসিক প্রতিবন্ধী) পুরুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। টিমের সদস্যদের নিয়ে ভবঘুরে এসব মানসিক প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়িয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় সকলের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে সেনা সদস্য কাজী সুজন বলেন, দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে প্রথম সামাজিক কাজগুলো শুরু করি। পরবর্তীতে মায়ের অনুপ্রেরনায় সামাজিক কাজে আরোগতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে জড়িয়ে রাখা সেনা সদস্য কাজী সুজন এবং তার টিমের সদস্যদের স্বেচ্ছাসেবী কর্মকান্ডের প্রশংসা করে গৌরনদী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মো. রাজিব হোসেন বলেন, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ময়লা ও দুগর্ন্ধে একাকার মানসিক প্রতিবন্ধীেদের পাশে যখন কেউ ঘৃণা করে যেতে চায়না, সেইসব ব্যক্তিদের আপন মানুষ ভেবে তাদের পাশে ছুটে গিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছনতা থেকে শুরু করে, সু-চিকিৎসা, সেবা-যত্ন, খাবারের ব্যবস্থা এবং আশ্রয়ের ঠিকানা দিয়ে কাজী সুজন সমাজে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন গড়েছেন।
উল্লেখ্য, সেনা সদস্য কাজী সুজন গৌরনদী ব্লাড ডোনার্স ক্লাব (জিবিডিসি), টরকী এলাকায় ট্রাস্ট ওল্ড এজ এন্ড কেয়ার হোম এবং গৌরনদী অতিথি আপ্যায়ন ক্যাটারিং সার্ভিস নামের কয়েকটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এসব সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের মাধ্যমে আর্তমানবতার সেবা দিয়ে আসছেন সেনা সদস্য কাজী সুজন।
এছাড়াও তিনি (কাজী সুজন) ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের ভুজপুর এলাকায় বন্যাকবলিতদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিজের হাঁটুকে সিঁড়ি বানিয়ে অসুস্থ ও গর্ভবতী নারীদের ট্রাকে উঠতে সহায়তা করে মানবিক সেবার অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভাল কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সেনা সদস্য কাজী সুজন পুরস্কৃত করেছিলেন।