ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি চাকরিজীবীদের দীর্ঘ দশ দিনের ছুটি শেষে কর্মজীবী মানুষ আবার ফিরতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকায়। কোরবানির ঈদের আনন্দ উপভোগ করে এবার ছুটির সময়সীমা ছিল ৫ জুন (বৃহস্পতিবার) থেকে ১৪ জুন (শনিবার) পর্যন্ত। এ সময় ব্যাংক, বেসরকারি অফিস এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ছুটিও মিলেছে।
এই দীর্ঘ ছুটির শেষ প্রান্তে, শুক্রবার (১৩ জুন) সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষদের ভিড়। গাবতলী, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, ফুলবাড়িয়া, ধোলাইপাড় ও রায়েরবাগ এলাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মানুষদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ট্রেন, বাস ও মাইক্রোবাসে যাত্রা শেষে তারা রিকশা বা সিএনজিতে করে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত আমানুর রহমান জানান, “গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার আনন্দের তুলনা হয় না। তবে কাজের তাগিদে ফিরতেই হলো।” তিনি অভিযোগ করেন, আগের তুলনায় বাসভাড়া বেশি দিতে হয়েছে এবং সিট পাওয়াটাও ছিল কষ্টকর।
আসমা খাতুন নামের এক স্কুলশিক্ষিকা বলেন, “আমার স্কুল খুলছে রোববার (১৫ জুন)। তাই বাধ্য হয়ে ভিড় ঠেলে ফিরতে হয়েছে। ৩০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে।”
পরিবহন মালিকদের একজন, তোফায়েল হোসেন জানান, এবার দীর্ঘ ছুটির কারণে যাত্রীদের ঢাকায় ফেরা একটু বিলম্বিত হয়েছে, তবে শুক্রবার থেকে চাপ অনেক বেড়েছে। অতিরিক্ত বাস দিলেও যাত্রী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের মানুষ সায়েদাবাদ, ধোলাইপাড়, রায়েরবাগসহ বিভিন্ন পথে ঢাকায় প্রবেশ করছেন।
ফেরার পথে ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভের শেষ নেই। সুজাতা নামের এক নারী জানান, ফুলবাড়িয়া থেকে শনিরআখড়ার স্বাভাবিক ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা হলেও শুক্রবার দিতে হয়েছে ৬০০ টাকা।
সিএনজি অটোরিকশা চালক মো. কাদের বলেন, “সকাল থেকেই যাত্রীদের চাপ বেশি। দূরে যেতে চাইলেও ফেরার পথে যাত্রী মেলে না বলে কিছুটা বেশি ভাড়া নিচ্ছি।”
গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। ট্রাফিক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। যাত্রীদের সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে দালাল ও পকেটমারদের ব্যাপারে।
ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের যাত্রাবাড়ী অঞ্চলের এসআই মনির হোসেন জানান, “সকাল থেকেই যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। এখনো বড় কোনো যানজট হয়নি, তবে কয়েকটি এলাকায় সড়কে যাত্রীদের নেমে পড়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে।”
কমলাপুর রেলস্টেশনেও শুক্রবার সকাল থেকে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ঈদের আগে রেলের ১০ দিনের ছুটি কার্যত শুক্রবার শেষের দিকে পৌঁছায়। আগাম টিকিটধারীরা লম্বা ছুটি শেষে রাজধানীতে ফিরছেন।
রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকালেই ১০টি আন্তঃনগর ট্রেন কমলাপুর স্টেশনে এসেছে এবং সবগুলো সময়মতো পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম থেকে ফিরে রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “যেতে একটু ভোগান্তি হলেও ফেরার সময় সমস্যা হয়নি। তবে যাত্রীর চাপ প্রচুর ছিল।”
সিলেট থেকে আসা সাহিদা বেগম বলেন, “ঈদের আগে আনন্দ ছিল। এখন কাজে ফেরার তাগিদে মন খারাপ নিয়েই ফিরতে হচ্ছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাহমিদ হোসেন বলেন, “বাড়ি গেলে আর ফিরতে মন চায় না। তবু জীবিকার প্রয়োজনে ফিরতেই হয়।”
এবার ঈদ উপলক্ষে রেল মন্ত্রণালয় ১০টি বিশেষ ট্রেন চালু করে এবং ঢাকায় কোরবানির পশু সরবরাহ নিশ্চিত করতে চালানো হয় তিনটি ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন। ফিরতি যাত্রার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় একাধিক দিন ধরে আগাম টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করে।
ফিরতি যাত্রায় স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তা খুব কমই দেখা গেছে। রেল মন্ত্রণালয় যাত্রীদের মাস্ক পরার অনুরোধ জানালেও অধিকাংশ যাত্রী তা মানেননি।
সরকারি অফিস খুলছে শনিবার (১৪ জুন)। ফলে শুক্রবার ও শনিবার ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, রোববার (১৫ জুন) থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে।