আসছে নতুন আহ্বায়ক কমিটি

ভেঙে যাচ্ছে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি

এফএনএস (এইচ এম শহীদুল ইসলাম, সিলেট) : : | প্রকাশ: ১৩ জুন, ২০২৫, ০৪:২১ পিএম
ভেঙে যাচ্ছে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি

সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটি শিগগিরই বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে। পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটির পরিবর্তে গঠন করা হবে নতুন আহ্বায়ক কমিটি। সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি আনা এবং তৃণমূলে দলকে আরও সক্রিয় করতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত ১৭ বছরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় নেতাকর্মীদের নিয়েই গঠিত হবে নতুন আহ্বায়ক কমিটি। নিষ্ক্রিয় কিংবা বিতর্কিত নেতারা এতে স্থান পাবেন না। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর যারা দলের নীতির বাইরে অবস্থান নিয়েছেন বা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের নতুন কমিটিতে রাখা হবে না। নতুন আহ্বায়ক কমিটি উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে। সবশেষে অনুষ্ঠিত হবে জেলা ও মহানগর বিএনপির সম্মেলন।

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, এই রদবদলের মাধ্যমে সিলেট বিএনপি আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতিতে আরও সংগঠিত হবে এবং মাঠপর্যায়ে কার্যক্রমে গতি আসবে।

পুরনো কমিটির নিষ্ক্রিয়তা

২০২২ সালের ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির সম্মেলনে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সভাপতি ও অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রায় এক বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হলেও শুরু থেকেই ত্যাগীদের যথাযথ মূল্যায়ন না করার অভিযোগ ওঠে।

জানা গেছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনে জেলা বিএনপির বেশিরভাগ নেতাই ছিলেন নিষ্ক্রিয়। হরতাল ও অবরোধে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ হাতে গোনা কয়েকজন নেতাই রাজপথে সক্রিয় ছিলেন।

মহানগর বিএনপির ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। ২০২৩ সালের ১০ মার্চ সম্মেলনে নাসিম হোসাইন সভাপতি ও ইমদাদ হোসেন চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আন্দোলনের সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মাঠে থাকলেও মহানগরের বেশিরভাগ ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা ছিলেন অনুপস্থিত। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দেশের বাইরে চলে যান, যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পরে নাসিম হোসাইনকে সরিয়ে মিফতাহ্ সিদ্দিকীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং এরপর ৪ নভেম্বর রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়।

অপকর্ম ও শৃঙ্খলাহীনতা

তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, বিগত আন্দোলনে হাতেগোনা কয়েকজন নেতা সক্রিয় ছিলেন, অধিকাংশই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ৫ আগস্টের পর দলের কিছু নেতা নানা অপকর্মে জড়ান, যা দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। সর্বশেষ বুধবার প্রকাশ্যে মারামারির ঘটনায় জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কোহিনূর আহমেদকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগেও একাধিক নেতা বহিষ্কৃত হয়েছেন।

বিএনপির অনেক নেতা স্বীকার করেছেন, দলে বর্তমানে শৃঙ্খলার অভাব রয়েছে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। তারা মনে করেন, আন্দোলনে ভূমিকা রাখা ও ক্লীন ইমেজের নেতাদের গুরুত্ব দিলেই দলকে শক্তিশালী করা যাবে।

জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল আহাদ খান জামাল বলেন, “দলকে পুনর্গঠনের এই উদ্যোগ সময়োপযোগী। ত্যাগী ও দক্ষ নেতাদের দিয়ে নতুন কমিটি হলে মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম অনেক বেশি দৃশ্যমান হবে।”

কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী জানান, “আমরা তৃণমূলে যাচাই-বাছাই করছি। শিগগিরই নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে। ত্যাগীদের মূল্যায়নই হবে প্রধান বিবেচ্য।”

নতুন কমিটির অপেক্ষায় ছাত্রদলও

সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি গঠনের সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ঘোষণা হয়নি নতুন নেতৃত্ব। সবশেষ ২০১৮ সালের ১৩ জুন জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি গঠিত হয়, যা আড়াই বছর পর পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। তারপর পেরিয়ে গেছে আরও কয়েকটি বছর।

এই সময়কালে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা বিএনপির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনবিরোধী আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ছাত্রদলের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো।

তবে দীর্ঘদিন ধরে নতুন কমিটির প্রতীক্ষায় রয়েছেন পদপ্রত্যাশীরা। প্রায় এক বছর ধরে কমিটি ঘোষণার গুঞ্জন থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি, ফলে নেতাকর্মীদের মাঝে বাড়ছে ক্ষোভ ও হতাশা।

সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকিরুল ইসলাম চৌধুরী জিসান বলেন, “আমরা নতুন কমিটির অপেক্ষায় আছি। কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন-এই মাসের মধ্যেই আমরা নতুন কমিটি পেতে পারি।”

নতুন নেতৃত্ব ও তৃণমূল সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও ছাত্রদল নতুন কমিটির দ্রুত ঘোষণার দাবি জানিয়েছে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে