ইসরায়েলি হামলায় ইরানে নিহত ৭০, প্রতিশোধে প্রস্তুত তেহরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ১৩ জুন, ২০২৫, ০৮:৩২ পিএম
ইসরায়েলি হামলায় ইরানে নিহত ৭০, প্রতিশোধে প্রস্তুত তেহরান

ইরানের রাজধানী তেহরানসহ দেশজুড়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর নজিরবিহীন এক অভিযানে নিহত হয়েছেন অন্তত ৭০ জন এবং আহত হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ। শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় সময় ভোররাতে শুরু হওয়া এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’, যা ইরানে ইসরায়েলের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সামরিক হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই হামলায় ইরানের সামরিক ও পরমাণু স্থাপনাগুলো ছিল মূল লক্ষ্য। প্রায় ২০০টি যুদ্ধবিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে ইসরায়েল একশ’র বেশি স্থানে হামলা চালায়। লক্ষ্যবস্তুতে ছিলো—পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র, ব্যালিস্টিক মিসাইল ঘাঁটি, সামরিক সদর দপ্তর এবং আবাসিক ভবন।

ফার্স নিউজ এজেন্সি জানায়, এই হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি

ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান হোসেইন সালামি

খাতাম আল-আনবিয়া সদর দপ্তরের কমান্ডার গোলাম আলি রশিদ

এ ছাড়া অন্তত ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীও নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রকাশিত নামগুলো হলো—ফেরেয়দুন আব্বাসি, মোহাম্মদ মাহদি তেহরানচি, আব্দুলহামিদ মিনৌচেহর, আহমাদ রেজা জোলফাঘারি ও আমিরহোসেইন ফেকহি। একজন বিজ্ঞানীর নাম এখনও জানানো হয়নি।

ইসরায়েলের এই আক্রমণের পর পুরো ইরানজুড়ে চরম ক্ষোভ দেখা গেছে। রাজধানী তেহরানের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়—“ইসরায়েল নিপাত যাক, আমেরিকা নিপাত যাক” স্লোগান।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, “ইহুদিবাদী সরকার আমাদের প্রিয় দেশের বুকে রক্তাক্ত হাত বিস্তার করেছে। এর জন্য তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।” তিনি এটিকে ইসরায়েলের জন্য “তিক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক পরিণতির সূচনা” হিসেবে বর্ণনা করেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান দেশবাসীকে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, ইরান তার নেতৃত্বে বিশ্বাস রাখে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাগচি একে “যুদ্ধের ঘোষণা” আখ্যা দিয়ে বলেছেন, “এই আগ্রাসনের শক্তিশালী ও কৌশলগত জবাব দেওয়া হবে।”

বিক্ষোভকারীরা হামলায় নিহত বিজ্ঞানী ও সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকে জাতির বিরুদ্ধে বড় ধরনের আঘাত হিসেবে দেখছে। এক অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক বলেন, “আর কতদিন আমরা ভয়ে বাঁচব? এখনই প্রতিশোধের সময়।” আরেক গাড়িচালক বলেন, “নেতানিয়াহুকে থামানো না গেলে আমাদের পরিণতি গাজার মতো হবে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “যতদিন না আমাদের লক্ষ্য অর্জিত হবে, অপারেশন রাইজিং লায়ন চলবে।” তাঁর ভাষায়, এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে ধ্বংস করে দেওয়া।