ইরানে আগেই ঢুকে পড়েছিল বিস্ফোরক ও ড্রোন: মোসাদের গোপন মিশনের পেছনের কাহিনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ১৪ জুন, ২০২৫, ০৮:০২ পিএম
storage/2025/june/14/news/fair-news-service_684d8109b644c-1749909769.jpg

ইসরায়েল তার সশস্ত্র ও গোয়েন্দা বাহিনীর সমন্বয়ে শুক্রবার (১৩ মে) ভোররাতে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং শীর্ষ কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে নিখুঁত এক গোপন অভিযান চালায়। এই ‘রাইজিং লায়ন’ নামক অভিযানে ইরানের বিপ্লবী গার্ড কোরের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, সামরিক বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি এবং পদার্থবিজ্ঞানী মোহাম্মদ মেহদি তেহরাঞ্চিসহ বহু শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তি নিহত হন।

ইসরায়েলি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নেতৃত্বে দীর্ঘ বছর ধরে পরিকল্পিত ও প্রস্তুত এই হামলা ছিল বহুস্তরবিশিষ্ট। অভিযান শুরু হয় ইরানের অভ্যন্তরে মোসাদের ছদ্মবেশী সশস্ত্র কমান্ডো দল ও বিস্ফোরকভর্তি ড্রোন দ্বারা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা দিয়ে, পরে তা পর্যায়ক্রমে সামরিক ও বিমান হামলায় রূপ নেয়। হামলার সময় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ বলয়ের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং পারমাণবিক কর্মসূচির অভিজাত বিজ্ঞানীরা লক্ষ্যবস্তু ছিল।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরে মোসাদ ইরানের বিভিন্ন স্থানে গোপন অস্ত্র এবং বিস্ফোরক ড্রোনের ঘাঁটি তৈরি করে। বিশেষ করে তেহরানের কাছে এসফাজাবাদে একটি ড্রোন ঘাঁটি স্থাপন করা হয়, যেখান থেকে বিস্ফোরকবাহী ড্রোন ছোঁড়া হয় এবং ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলোকে নিশানা করে হামলা চালানো হয়।

মোসাদের গোপন কমান্ডো ইউনিটগুলো ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করার জন্য সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল ব্যাটারি এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে খোলা জায়গায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গাইডেড অস্ত্র স্থাপন করে। এর ফলে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানগুলো নির্বিঘ্নে ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে শতাধিক বিমান হামলা চালাতে সক্ষম হয়।

ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ‘রাইজিং লায়ন’ অভিযানের প্রথম ধাপ ছিল। এর মাধ্যমে ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, বিজ্ঞানী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নির্মূল করা হয়। হামলার সময় মোসাদ বিভিন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পাশাপাশি ইরানের দ্বিতীয় স্তরের কমান্ডার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে তাদের অবস্থান প্রকাশের সংকেত দেয়। কারও কাছে দরজার নিচ দিয়ে গোপন চিঠি পৌঁছানো হয়, কেউ ফোন কলের মাধ্যমে হুমকি পায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই হামলার প্রশংসা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘তারা সবাই এখন মৃত।’ তিনি আরও সতর্ক করেছেন, যদি ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালায়, তবে আরও কঠোর হামলা আসবে।

পশ্চিমা নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে, তবে তা স্থায়ী হবে কি না তা বলা কঠিন। ইরান এখনও দাবি করছে তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

এই অভিযান ইরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গভীর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, কারণ এটি প্রমাণ করল ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়েও সুরক্ষিত নয়। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের জন্য এই সফলতা ছিল দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুত ও পরিকল্পিত এক সূক্ষ্ম কৌশলগত হামলা।

সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, সিএনএন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিবৃতি।