বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্রে ইসরায়েলি হামলা, পারমাণবিক আলোচনা বাতিল

মধ্যরাতের ক্ষেপণাস্ত্রবৃষ্টিতে কেঁপে উঠল ইসরায়েল ও ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
| আপডেট: ১৫ জুন, ২০২৫, ১০:৪৬ এএম | প্রকাশ: ১৫ জুন, ২০২৫, ১০:১১ এএম
মধ্যরাতের ক্ষেপণাস্ত্রবৃষ্টিতে কেঁপে উঠল ইসরায়েল ও ইরান

মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে ফের উত্তেজনা—শনিবার (১৪ জুন) রাত থেকে রোববার (১৫ জুন) ভোর পর্যন্ত একের পর এক পাল্টাপাল্টি হামলায় কেঁপে উঠেছে ইসরায়েল ও ইরান। ইসরায়েল তার ‘বিস্ময়কর অভিযান’ সম্প্রসারিত করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র দক্ষিণ পার্সে হামলা চালায়। এরই জবাবে ইরান মধ্যরাতের পর ইসরায়েল লক্ষ্য করে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।

এই ঘটনার জেরে ওমানে নির্ধারিত ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক আলোচনা বাতিল করা হয়। ওয়াশিংটনের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই আলোচনাই ছিল ইসরায়েলি হামলা থামানোর একমাত্র উপায়। এদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “এই হামলাগুলো কিছুই নয়, ইরান আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে।”

বিবিসি ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, শনিবার (১৪ জুন) রাত ১১টার কিছু পর জেরুজালেম ও হাইফায় বেজে ওঠে বিমান হামলার সাইরেন। প্রায় ১০ লাখ মানুষ তড়িঘড়ি করে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যান। এরপর ভোররাত ২টা ৩০ মিনিটের দিকে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা দেয় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। তেল আবিব ও জেরুজালেমের আকাশে গর্জে ওঠে বিস্ফোরণ, পাল্টা উৎক্ষেপণ করা হয় প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র।

এই হামলায় অন্তত ৮ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে একজন ১০ বছরের শিশু ও ২০-এর কোঠার এক নারী রয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপে টর্চ ও প্রশিক্ষিত কুকুরের সাহায্যে জীবিতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালান।

তেল আবিবের দক্ষিণে বাট ইয়াম শহরে একটি ৮ তলা ভবনে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে বহু মানুষ আটকে পড়েন। ইসরায়েলি গণমাধ্যম বলছে, সেখানে কমপক্ষে ৩৫ জন নিখোঁজ।

শুক্রবার (১৩ জুন) থেকে শুরু হওয়া ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলায় ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত ৯ জন নিহত এবং ৩০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

তেহরান জানায়, ইসরায়েলের প্রথম দিনের অভিযানে ইরানে ৭৮ জন নিহত হন। পরদিন আরও অনেকের মৃত্যু হয়, এর মধ্যে একটি ১৪ তলা অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে হামলায় ৬০ জন নিহত হন, যাদের ২৯ জনই শিশু।

তেহরানের শাররান তেলের গুদামে আগুন ধরে যায় ইসরায়েলি হামলার পর। রাজধানীর নিকটবর্তী এক তেল পরিশোধনাগারেও হামলার ফলে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভবনও হামলার শিকার হয়, তবে সেখানে আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম।

তাসনিম জানায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’-এ হামলার ফলে সেখানে আংশিক উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয় ইরান। দক্ষিণ বুশেহার প্রদেশের উপকূলে অবস্থিত এই ক্ষেত্র থেকেই ইরানের গ্যাস উৎপাদনের বড় অংশ আসে।

শুক্রবার (১৩ জুন) ইসরায়েলি হামলার পর থেকেই আশঙ্কায় তেলের দাম ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। যদিও ওই দিন ইসরায়েল তেল ও গ্যাসক্ষেত্র এড়িয়ে গিয়েছিল।

ওমানের রাজধানীতে রবিবার (১৫ জুন) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক আলোচনা, যা শেষমুহূর্তে বাতিল হয়। ইরানের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানান, “যখন আমাদের দেশের ওপর বর্বরোচিত হামলা চলছে, তখন আলোচনা সম্ভব নয়।”

ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের জেনারেল এসমাইল কোসারি জানান, ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়ে ভাবছে। এই প্রণালী দিয়েই উপসাগরীয় অঞ্চলের তেল পরিবহন হয়।

ইসরায়েল জানিয়েছে, এই অভিযান কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে। নেতানিয়াহু ইরানের জনগণকে তাদের ইসলামি শাসকদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে আহ্বান জানান। ইসরায়েলের মানবাধিকার সংস্থা ‘বেতসেলেম’ বলেছে, “কূটনৈতিক সমাধানের সব পথ পরিহার করে ইসরায়েল এক ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু করেছে, যা পুরো অঞ্চলকে বিপদে ফেলতে পারে।”

ইরান হুঁশিয়ার করে বলেছে, যদি তার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে কোনো দেশের ঘাঁটি ব্যবহৃত হয়, তবে সেসব ঘাঁটিও হামলার শিকার হবে।

তবে গাজায় ২০ মাস ধরে চলমান যুদ্ধ ও গত বছরের লেবানন সংঘাতে ইরানের প্রধান দুই মিত্র হামাস ও হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে পড়ায় ইরানের প্রতিশোধ নেওয়ার কৌশল সীমিত হয়ে পড়েছে।

ইসরায়েল মনে করে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তারা বলছে, এই বোমাবর্ষণ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের চূড়ান্ত ধাপ থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। ইরান অবশ্য দাবি করছে, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক।

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, ইরান আন্তর্জাতিক ‘পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি’র নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW