ইশরাককে শপথ না করানোয় অচল নগর ভবন, আন্দোলন গড়াল দ্বিতীয় মাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৫ জুন, ২০২৫, ০১:৩৭ পিএম
ইশরাককে শপথ না করানোয় অচল নগর ভবন, আন্দোলন গড়াল দ্বিতীয় মাসে

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাচিত মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানোর প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন গড়িয়েছে দ্বিতীয় মাসে। রোববার (১৫ জুন) ঈদের ১০ দিনের ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে নগর ভবনে ফের অবস্থান নেয় ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়ন ও ইশরাকপন্থী সমর্থকরা। ফলে এক মাসের বেশি সময় ধরে কার্যত অচল হয়ে আছে নগর ভবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বিপুল ভোটে জয়ী হন। পরবর্তীতে ভোটে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ফল বাতিল চেয়ে মামলা করেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। সেই মামলার প্রেক্ষিতে ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল তাপসের জয় বাতিল করে এবং ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে ইশরাককে মেয়র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

তবে গেজেট প্রকাশের পরও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইনি জটিলতার অজুহাতে শপথ অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকে। এর প্রতিবাদে ১৫ মে থেকে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি সমর্থিত নেতাকর্মীরা। পরে ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নও এ আন্দোলনে যোগ দেয়। নগর ভবনে তালা দিয়ে সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঈদ উপলক্ষে আন্দোলন কিছুটা শিথিল হলেও ছুটি শেষে আবারও শুরু হয়েছে নতুন করে আন্দোলন।

রোববার সকাল থেকেই নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। বেলা ১১টার দিকে সেখানে উপস্থিত হন ইশরাক হোসেন। তিনি ঘোষণা দেন, এই আন্দোলন চলমান থাকবে এবং নতুন কর্মসূচি হিসেবে “বিরতিহীন অবস্থান” কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।

ইশরাক হোসেন বলেন, “সরকার হয়তো ভাবছে আমি জনশক্তির জোরে আন্দোলন করছি। এটা ভুল। আমি আইনগতভাবে নির্বাচিত মেয়র। আমাকে মুছে ফেলা যাবে না। যারা বাধা দিচ্ছেন, ভবিষ্যতে তাদের আইনি জবাব দিতে হবে। তবে এখনই আমরা তা চাই না।”

তিনি আরও বলেন, “নগর ভবনের প্রধান ফটকের তালা প্রতীকি প্রতিবাদ হিসেবে থাকলেও জরুরি সেবাগুলো আমাদের তত্ত্বাবধানে চালু থাকবে। অন্যান্য বিভাগ এখানে কাজ করতে পারবে না।”

এদিকে, দীর্ঘ সময় নগর ভবন বন্ধ থাকায় নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, “অফিসে এসেছিলাম কিন্তু ভেতরে ঢুকতে পারিনি। আগের মতোই বাইরে ঘোরাফেরা করছি।”

এর আগে গত ৩ জুন ঈদের কারণে আন্দোলন সাময়িক শিথিল ঘোষণা করেছিলেন ইশরাক। তখন তিনি বলেছিলেন, ঈদের পর দাবি আদায় না হলে আবারও আন্দোলনে ফিরবে ঢাকাবাসী। সেই ঘোষণা অনুযায়ী রোববার থেকে ফের আন্দোলনে সক্রিয় হয়েছে সমর্থকরা।

আইনি দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, হাইকোর্টে দায়ের করা রিট আবেদন কয়েক দফা শুনানির পর খারিজ হয়ে গেছে। তারপরও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত শপথ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়নি।

এই অবস্থায় নগর ভবনের কার্যক্রম কবে স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে