লন্ডনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত দ্রুত ইসিকে জানান—অন্তর্বর্তী সরকারকে সালাহউদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৬ জুন, ২০২৫, ০৬:১১ পিএম
লন্ডনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত দ্রুত ইসিকে জানান—অন্তর্বর্তী সরকারকে সালাহউদ্দিন

সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের পর দেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আরও জোরালো হয়েছে। এরই মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে সিদ্ধান্ত লন্ডনের বৈঠকে গৃহীত হয়েছে, তা দ্রুত নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানানো হোক। এই দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিএনপি বলেছে, জনগণের পক্ষে গণতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্যে এমন পদক্ষেপ জরুরি।

সোমবার (১৬ জুন) ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কল্যাণ রাষ্ট্রের ভাবনায় জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এই দাবি জানান। তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, জনগণের পক্ষ থেকে, গণতন্ত্রের পক্ষ থেকে আমরা যাতে দ্রুত ডেমোক্রেটিক ট্রান্সফরমেশনে যেতে পারি, সেজন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম আপনারা গ্রহণ করুন।”

তিনি আরও বলেন, “লন্ডনের আলোচনার ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, তা নির্বাচন কমিশনে যথাযথ প্রক্রিয়ায় দ্রুত জানানো প্রয়োজন। যেন নির্বাচন কমিশন জনগণকে জানাতে পারে, তারা সরকারের কাছ থেকে কোনো পরামর্শমূলক বা নির্দেশনামূলক বার্তা পেয়েছে।”

গত শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে তিনি বলেন, আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার ও বিচারিক অগ্রগতি অর্জিত হয়, তাহলে রমজানের আগেই, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির শেষভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

এই প্রসঙ্গে বৈঠক-পরবর্তী সময়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন সম্ভব, যদি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা যায়।”

অন্যদিকে রোববার (১৫ জুন) ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, লন্ডনের ঘোষণার বিষয়ে তিনি কেবল সংবাদমাধ্যম থেকেই জেনেছেন। এ বিষয়ে তার কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি বা বার্তা আসেনি।

সিইসি বলেন, “যৌথ বিবৃতিতে কোনো স্বাক্ষর নেই। যদি সরকার এবং রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর থাকত, তাহলে এটা অফিসিয়াল ডকুমেন্ট হিসেবে ধরা যেত। যেহেতু তা হয়নি, অফিসিয়ালি কিছু না এলে আমাদের কিছু করণীয় নেই।”

তিনি আরও যোগ করেন, “ঘোষণা তো হয়েছে, কিন্তু ঘোষণা মানেই সব নয়। এর পেছনে আরও আলোচনা থাকতে পারে, যেগুলো আমাদের জানতে হবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য।”

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ এবং সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অনুযায়ী। এই সরকার সাংবিধানিক ভিত্তিতে পরিচালিত হলেও, তাদের বৈধতা আগামী নির্বাচিত সংসদে অনুমোদিত হতে হবে।

তিনি বলেন, “উপদেষ্টারা যেহেতু মন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করছেন, তাই সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের যে যোগ্যতা থাকতে হয়, তা তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সেখানে বিদেশি নাগরিকত্বসহ কয়েকটি বিষয়ে বিধিনিষেধ রয়েছে, যা উপদেষ্টা পরিষদকে মাথায় রাখতে হবে।”

বৈঠকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানতে চান, লন্ডনের আলোচনায় কোনো দায়মুক্তির বিষয় আলোচনা হয়েছে কি না। জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, “দায়মুক্তি বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।”

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল এবং নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW