জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আয়োজিত সংলাপের দ্বিতীয় ধাপের বৈঠকে অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এই সংলাপ বয়কট করেছে দলটি। লন্ডনে অনুষ্ঠিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতিতে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি ঘোষণার প্রতিবাদেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বেলা ১১টার পরে সংলাপের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলেও জামায়াতের কোনো প্রতিনিধিদল সেখানে উপস্থিত হয়নি। বরং বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল, যার নেতৃত্ব দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, এবং এনসিপির তিন সদস্য সংলাপে অংশ নেন।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান, নেতারা অংশ নিচ্ছেন কি না তা যাচাই করে জানানো হবে। পরে তিনি বলেন, “জামায়াত সংলাপে যোগ দিলে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল তারা বৈঠকে অংশ নেবে না। তাদের দাবি, লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি ঘোষণার মাধ্যমে জামায়াতকে ‘অগ্রাহ্য’ করা হয়েছে। বিষয়টি দৃষ্টিকটু এবং এ ধরনের ঘোষণা দেশে এসে দিলে গ্রহণযোগ্য হতো বলে মনে করে দলটি। প্রতিবাদস্বরূপ তারা বৈঠকে অংশ নেয়নি। কমিশনের পক্ষ থেকে পরে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও তাতে সাড়া মেলেনি।
তবে জামায়াতের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তারা ইউনূস-তারেক বৈঠককে সাধুবাদ জানালেও বিবৃতির ভাষা ও প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তুষ্ট। তাদের মতে, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরামর্শ না করে এ ধরনের ঘোষণা ঐকমত্যের চেতনাবিরোধী।
এর আগে ঈদের আগের (৩ জুন) বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেন নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ। ওই দিন সকালবেলা সংবাদ সম্মেলনের কারণে তাঁরা বৈঠকে দুপুরে যোগ দেন।
এবারের সংলাপে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “সংলাপ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানেন নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তাঁর সঙ্গেই কথা বলতে হবে।” তাহেরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একইভাবে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদের পক্ষ থেকেও জানানো হয়, “সম্ভবত আজ যোগ দেবেন না, কালকের সংলাপে যোগ দিতে পারেন।”
এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের আগামী নির্বাচন সামনে রেখে যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে, জামায়াতের এমন অবস্থান তার গতিপথকে কিছুটা জটিল করে তুলতে পারে।