ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে চলমান উত্তেজনা নিরসনে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠকের জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স অথবা মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফকে পাঠানোর কথা বিবেচনা করছেন। বিষয়টি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ ও অ্যাক্সিওসের বরাতে জানা গেছে।
সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদক, যিনি ট্রাম্পের সঙ্গে এয়ার ফোর্স ওয়ানে কানাডা থেকে ওয়াশিংটনে ফিরছিলেন, জানিয়েছেন—ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘প্রকৃত সমাধান’ চান এবং তেহরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ইচ্ছা ‘পুরোপুরি ত্যাগ’ করে, সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন। তবে ভ্যান্স বা উইটকফকে আলোচনায় পাঠানো হবে কি না, তা নির্ভর করছে ওয়াশিংটনে ফিরে তিনি কী পরিস্থিতি দেখেন তার ওপর।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে এই বৈঠক এ সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছে অ্যাক্সিওস। সংবাদমাধ্যমটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ চারটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, ওয়াশিংটন এখন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন দূত উইটকফের বৈঠকের সময় ও স্থান নির্ধারণে কাজ করছে।
বৈঠকের সম্ভাব্য উদ্দেশ্য হবে—ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত থামানো এবং পারমাণবিক ইস্যুতে কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোঁজা। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এটি ট্রাম্পের শেষ বড় প্রচেষ্টা হতে পারে, যেখানে যুদ্ধ এড়িয়ে আবারও আলোচনার মাধ্যমে চুক্তিতে পৌঁছাতে চাওয়া হচ্ছে।
এই উদ্যোগ এমন এক সময়ে নেওয়া হচ্ছে, যখন গত শুক্রবার (১০ জুন) ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে শীর্ষ বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করে। এর ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই হামলার পর তেহরানে বিস্ফোরণ এবং সম্ভাব্য পাল্টা প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে।
এমন অবস্থায় ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ইরানি নাগরিকদের তেহরান ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার আহ্বান জানান, যা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে জল্পনা-কল্পনা সৃষ্টি করে যে, যুক্তরাষ্ট্র কি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে?
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যালেক্স ফাইফার স্পষ্ট করে বলেছেন, মার্কিন বাহিনী এখনো আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছে এবং কোনো যুদ্ধ জড়িত হওয়ার নির্দেশনা নেই। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ফক্স নিউজকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চান।’
এক মার্কিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ‘ফোরদো’ ধ্বংসে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে শক্তিশালী ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা রয়েছে, যা ইসরায়েলের নেই। ট্রাম্প এই বাস্তবতাকে আলোচনায় চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছেন।
তিনি বলেন, “ট্রাম্প সবকিছুই চুক্তি ও সুবিধার দিক দিয়ে বিবেচনা করেন। এটি একটি বড় সুবিধা। ইরান চাপে আছে কি না, এবং তারা আদৌ বুঝেছে কি না যে আলোচনাই টিকে থাকার একমাত্র উপায়—এগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।”
রোববার (১১ জুন) কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে ট্রাম্প এই সংকট নিয়ে ফ্রান্স, কানাডা ও অন্যান্য নেতার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সাংবাদিকদের বলেন, “আমেরিকানরা ইরানিদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে। দেখা যাক কী হয়।”
সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “আমরা ফোনে কথা বলছি। কিন্তু সামনাসামনি কথা বলাই ভালো। আমি মনে করি একটা চুক্তি হবে। যদি না হয়, সেটা ইরানের বড় ভুল হবে।”