দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (এনসিসি) আলোচনার দ্বিতীয় পর্যায়ের তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বুধবার (১৮ জুন)। এদিনের বৈঠকে অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। বিশেষত, বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের যৌথ সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জামায়াত সরাসরি বলেছে—এই ঘটনায় দেশের সব রাজনৈতিক দলই কম-বেশি বিব্রত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের তৃতীয় বৈঠকের বিরতিতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের যৌথ সংবাদ সম্মেলন ইতিহাসের বিরল ঘটনা। এ ঘটনায় দেশের বাকি সব দলই কিছুটা বিব্রত। এখানেই আমাদের আপত্তি ছিল।’’
জামায়াতের বক্তব্যের পেছনে আছে এক সপ্তাহ আগের একটি প্রেক্ষাপট। শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে তারা একটি যৌথ বিবৃতি দেন এবং সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা দেওয়া হয়—আগামী রমজান শুরুর আগেই (ফেব্রুয়ারির মধ্যে) জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র ও বিএনপি নেতারা।
এই ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ গত সপ্তাহে বসে এবং তারা সিদ্ধান্ত নেয় দ্বিতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় বৈঠকে অংশ নেবে না। দলটির মতে, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর জামায়াতকে ‘উপেক্ষা’ করা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতের আমিরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়।
এ বিষয়ে সৈয়দ তাহের বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতে ইসলামী আমিরের বক্তব্য অনুধাবনের চেষ্টা করেছেন। সে কারণেই আমরা বুধবারের (১৮ জুন) আলোচনায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
তবে শুধু যৌথ সংবাদ সম্মেলন নয়, এনসিসির কাঠামো ও এখতিয়ার নিয়েও জামায়াত তাদের মতভেদ তুলে ধরে। তাহের বলেন, ‘‘আমরা চাই না, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি এই কমিশনের আওতায় আসুক। একইভাবে, তিন বাহিনী প্রধানের নিয়োগও এনসিসির হাতে থাকা উচিত নয়। এসব বিষয়ের আরও বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন।’’
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত নেতারা স্পষ্ট করেন, তাদের উদ্দেশ্য সরকারকে ব্যর্থ করা নয়, বরং তারা গঠনমূলক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তাহের বলেন, ‘‘আমরা কখনোই সরকারকে ব্যর্থ করতে চাই না। বরং আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই।’’
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘‘জামায়াতের সঙ্গে আমাদের ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করছি, তারা ভবিষ্যত বৈঠকগুলোতেও অংশ নেবেন।’’
এনসিসির একটি সূত্র জানায়, জামায়াত শুরুতে বৈঠকে অংশ না নেওয়ার কথা জানায় এই যুক্তিতে যে, বিএনপির সঙ্গে সরকারের প্রকাশ্য ঘনিষ্ঠতা দলের প্রতি সরকারের অবজ্ঞার ইঙ্গিত দেয়।
এনসিসি গঠনের মূল লক্ষ্য, দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য সমাধান। তবে বিএনপি ও সরকারের মধ্যে প্রকাশ্য সম্পর্কের ঘটনা জাতীয় ঐকমত্যের এই প্রয়াসকে জটিল করে তুলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।