পাক সেনাপ্রধানের সাথে বৈঠকের আগেই মোদি-ট্রাম্পের ফোনালাপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
| আপডেট: ১৮ জুন, ২০২৫, ০৫:৩৪ পিএম | প্রকাশ: ১৮ জুন, ২০২৫, ০৫:১৪ পিএম
পাক সেনাপ্রধানের সাথে বৈঠকের আগেই মোদি-ট্রাম্পের ফোনালাপ

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সৃষ্ট সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও ‘অপারেশন সিন্দুর’ পরিচালনার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ৩৫ মিনিটব্যাপী এক টেলিফোন আলাপ হয়েছে। ভারতীয় সময় বুধবার (১৮ মে) সকালে এই ফোনালাপের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে। ফোনালাপের আগে ও পরে প্রকাশিত ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির একাধিক বিবৃতির মাধ্যমে আলোচনার বিষয়বস্তু ও কূটনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে সীমিত আকারে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। মোদির ভাষ্য অনুযায়ী, ৬ ও ৭ মে রাতে পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটি ও গোপন আস্তানাগুলো ছিল এই অভিযানের মূল লক্ষ্য। মোদি ট্রাম্পকে বলেন, এটি ছিল পরিমিত, সুনির্দিষ্ট এবং উত্তেজনা না বাড়িয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর কৌশলী পদক্ষেপ।

এরপর ৯ মে রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স মোদিকে ফোন করে সতর্ক করেন যে, পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মোদি তখন জানিয়ে দেন, এমন কিছু ঘটলে ভারত আরও কঠোর জবাব দেবে। অবশেষে ৯ ও ১০ মে রাতে ভারত সেই প্রতিক্রিয়া দেয় এবং পাকিস্তানের সামরিক অবকাঠামো বিশেষত বিমানঘাঁটিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করে। পররাষ্ট্রসচিবের ভাষ্য অনুযায়ী, ভারতের দৃঢ় অবস্থানের ফলে পাকিস্তান সামরিক অভিযান বন্ধের অনুরোধ জানাতে বাধ্য হয়।

আরো পড়ুন: ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মাঝে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প

ফোনালাপের সময় মোদি ট্রাম্পকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে ভারত কখনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা চায়নি এবং ভবিষ্যতেও চাইবে না। মোদির কথায়, এই বিষয়ে ভারতের সব মহলেই ঐকমত্য রয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ বন্ধ ও অধিকৃত কাশ্মীরের বিষয়ে হতে পারে। কোনো মধ্যস্থতাকারী বা তৃতীয় পক্ষের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।

এই বক্তব্যের মাধ্যমে মোদি ট্রাম্পের পূর্বঘোষিত একাধিক দাবি প্রত্যাখ্যান করলেন। ট্রাম্প বিভিন্ন সময় দাবি করেছেন, তিনি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে ভূমিকা রেখেছেন এবং ‘বাণিজ্য চুক্তি হুমকি’ দিয়েও দুই দেশকে শান্ত করেছেন। এমনকি ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ থামাতেও নিজের হস্তক্ষেপের কথা বলেছেন তিনি। মোদির বক্তব্যে এইসব দাবির প্রতি একরকম কূটনৈতিক প্রতিবাদই প্রকাশ পেল।

ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলা হলেও যে, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই, তারপরও প্রশ্ন উঠেছে—যুদ্ধবিরতির ঘোষণা প্রথম এল কেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে? ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি বা কাশ্মীর নিয়ে কোনো আলোচনার কথা না থাকলেও ট্রাম্প যে সে বিষয়ে দাবি করে আসছেন, তার জবাবে মোদির বক্তব্য কেন এখন এত দেরিতে এল?

ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব জানান, জি-সেভেন সম্মেলনের সময় মোদি-ট্রাম্প বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও, ট্রাম্প তড়িঘড়ি ফিরে যাওয়ায় তা হয়নি। পরে ট্রাম্পের আগ্রহেই ফোনালাপ হয়। এই আলোচনার দিনই (১৮ মে) ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় দুপুরে হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে বসবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।