ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অন্তর্গত ১৩টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে—যা ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিকে বহু গুণ বাড়িয়ে তুলেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রাক-বর্ষা সময়ে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলোতে লার্ভার ঘনত্ব নির্ধারিত মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, যা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে গেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার (১৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত ‘মৌসুম পূর্ব এডিস সার্ভে-২০২৫’ এর ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ চিত্র তুলে ধরা হয়। জরিপটি পরিচালিত হয়েছিল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে, জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায়।
জরিপে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামের একটি স্বীকৃত পরিমাপক সূচক। এর মাধ্যমে মশার প্রজননের হার নিরূপণ করা হয়। কোনো এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স যদি ২০ শতাংশের বেশি হয়, তবে সে এলাকা ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে বলে বিবেচিত হয়। এই সূচকের মান ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলে তা স্পষ্টভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
দুই সিটি করপোরেশনের মোট ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর ওপরে। অর্থাৎ এই ওয়ার্ডগুলোতে প্রতিটি ১০০টি সম্ভাব্য প্রজনন স্থানের মধ্যে কমপক্ষে ২০টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) :
এখানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ১২ নম্বর ওয়ার্ড, যেখানে ব্রুটো ইনডেক্স ধরা পড়েছে ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এরপরেই রয়েছে ২, ৮ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড (২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ) এবং ১৩ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড (২০ শতাংশ)।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) :
এই সিটির ৩১ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়া ৩, ৪৬ ও ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে সূচক দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশে এবং ৪ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌসুম শুরুর আগেই এই হার উদ্বেগজনক। বর্ষা মৌসুমে এডিস মশার প্রজননের হার আরও বেড়ে গেলে রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। জরিপ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদারের আহ্বান জানানো হয়েছে।