বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অবক্ষয় নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তাঁর অভিযোগ, বিগত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ঢাকার নওয়াব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। এই সেমিনারের শিরোনাম ছিল, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শিক্ষা দর্শন ও কর্মসূচি’। গত ৩০ মে ছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।
ড. মঈন খান তাঁর বক্তব্যে বলেন, “দেশে নতুন নতুন স্কুল হয়েছে, কিন্তু সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা থাকেন না। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন সমস্যা নয়, বরং সরকারের পরিকল্পিত ব্যর্থতার ফল। সরকার হয়তো জাতিকে মূর্খ রাখতে চেয়েছিল।” তিনি আরো বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান ছিলেন শিক্ষানুরাগী নেতা, যিনি শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি চালু করেছিলেন, বাস্তবমুখী শিক্ষার ধারণা দিয়েছিলেন এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিয়ে চিন্তা শুরু করেছিলেন।
তিনি বলেন, “শহীদ জিয়ার শিক্ষা দর্শন নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করা যায়। তিনি হিযবুল বাহারে মেধাবীদের নিয়ে সমুদ্রযাত্রায় গিয়েছিলেন, এটি তাঁর শিক্ষা অনুরাগেরই উদাহরণ। কিন্তু যারা নিজেদের জনগণের দল বলে দাবি করে, তারা কেন শিক্ষা ধ্বংস করে জাতিকে মূর্খ করতে চাইল?”
সেমিনারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “শহীদ জিয়া শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করতেন এবং গণমুখী শিক্ষা প্রবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থাকে গণমুখী করেছিলেন। তিনি কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেননি। শিক্ষকদের মতামত শুনেছেন, যা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রনায়কের বৈশিষ্ট্য।”
তিনি শেখ হাসিনার শাসনামলের শিক্ষা পরিস্থিতির সমালোচনা করে বলেন, “শেখ হাসিনা ছিলেন ফ্যাসিস্ট শাসক, যিনি সকল গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছিলেন। বিপরীতে, শহীদ জিয়া ছিলেন শৃঙ্খলা ও রাষ্ট্র পরিচালনার রূপরেখা নির্ধারণকারী একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক।”
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, “প্রেসিডেন্ট জিয়া সরাসরি কোনো দার্শনিক শিক্ষানীতি না দিলেও তার গৃহীত শিক্ষানীতিমালা, কর্মসূচি ও বক্তব্যে একটি পরিস্কার শিক্ষা দর্শন প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মানবিক, কারিগরি ও ধর্মীয় মূল্যবোধভিত্তিক নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।”
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের শুধু ভালো ফলাফলের দিকে না তাকিয়ে বরং জাতীয় চেতনা, চরিত্র গঠন ও মানবিক মূল্যবোধ অর্জনের লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন জিয়া।”
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, “গত ১৭ বছরে শিক্ষা ব্যবস্থাকে যে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য একটি শক্তিশালী শিক্ষানীতির দরকার। আমরা চাই, আগামীর বাংলাদেশ হবে শিক্ষানির্ভর।” তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে শিক্ষার উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন, অধ্যাপক এম এ কাউসারসহ বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি, ডিন, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও কর্মকর্তারা। অংশগ্রহণ করেন প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা।