বর্ষায় বেড়েছে দূর্ভোগ

তানোরে বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাটুপানি, পাঁকাকরণের দাবি গ্রামবাসির

মো: ইমরান হোসাইন; তানোর, রাজশাহী | প্রকাশ: ২০ জুন, ২০২৫, ০৩:৫৪ পিএম
তানোরে বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাটুপানি, পাঁকাকরণের দাবি গ্রামবাসির
সামান্য বৃষ্টিতে হাটুপানি কাঁদায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায় রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের অমৃতপুর গ্রামের ভিতর দিয়ে যাওয়া কাঁচা মাটির রাস্তা। এরমধ্যে গত প্রায় দুই বছর ধরে একটি কালভার্ট ভেঙ্গে রয়েছে। সেদিকে আজও দায়িত্বশীলদের নজরে পড়েনি। ফলে একমাত্র রাস্তা দিয়ে গ্রামে চলাফেরায় মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। বর্ষা মৌসুমে সে দূুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। সারাদেশে রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন হলেও এই গ্রামে এখনও সেই ছোঁয়া লাগেনি। প্রাচীন এই গ্রামে রয়েছে একটি দাখিল মাদ্রাসা, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি গ্রামীণহাট ও ফুটবল খেলার মাঠ। এই গ্রামের গ্রামীণ সাধুর হাটটি সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার বসে। আর সেই হাটে ৪ থেকে ৫ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় ও বিক্রয় করতে আসে। এই সেই ঐতিহ্যবাহী হাটে আসতে হলে কাঁচা রাস্তা দিয়ে আসতে হয়। কিন্তু এই সাধুর হাটটি থেকে সরকারি ভাবে ইজারা দিয়ে প্রতি বছর রাজস্ব আয় করে থাকে সরকার। কিন্তু এই গ্রামের রাস্তাটি এখনও পাকাকরণ করা হয়নি। ফলে রাস্তাটির বেহাল দশার কারণে গ্রামটির সার্বিক উন্নয়ন থমকে আছে। দ্রুতই এ জনগুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ রাস্তার আধুনিকায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন গ্রামের হাজারও বাসিন্দা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তানোর উপজেলার ১ নম্বর কলমা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অর্ন্তভুক্ত অমৃতপুর গ্রামটি। ওই গ্রামের হাজীর মোড় থেকে বিলবাতা শিহাবের বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এবং সাধুর হাট থেকে চন্দনকোঠা গ্রাম পর্যন্ত দুই কিলোমিটার মাটির কাঁচারাস্তা। ওই রাস্তা দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে কোন মতে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে রাস্তার খানাখন্দ ও গর্ত ভরে যায় বৃষ্টির পানিতে। তখন দেখে বোঝার উপায় থাকে না যে এটি রাস্তা নাকি ফসলের জমি। রাস্তার বেহাল দশার কারণে ভ্যান কিংবা অটোগাড়ী যেতে চায় না। ফলে এখনো গরুর গাড়ী তাদের একমাত্র ভরসা। তবে, আগের গরুর গাড়ী এই গ্রামের কৃষকরা আর ব্যবহার করে না। একারণে সকল পেশার মানুষের উৎপাদিত কৃষি পণ্যগুলো কম দামে বিক্রি করতে হয়। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলাচলের সময় রাস্তার গর্তের পানিতে পড়ে গিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বইখাতা কাঁদামাটিতে ভিজে যায়। বর্ষার সময়ে গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না জরুরি সেবার কোনো যানবাহন। তবে, নিরুপাই হয়ে কাঁদা মাটি দিয়ে পায়ে হেঁটে কষ্টে স্কুল-কলেজে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি কাঁদামাটি ও বৃষ্টির পানির সংমিশ্রণে কাঁদার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার এতো বছর পরও পাঁকাকরণ করা হয়নি রাস্তাটি। জনপ্রতিনিধিরা ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোটের পর আর তাদের দেখা মেলে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, সবাই মিলে একাধিকবার স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে রাস্তাটি পাঁকাকরণের জন্য দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু কেউ কোনো কাজ করেননি। তাই দূর্ভোগে কষ্টে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলা ফেরা করে মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েল আহমেদ বলেন, আমাদের জন্মের বহু বছর আগে পুরাতন এই কাঁচা রাস্তাটি রয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে কিছু কিছু এলাকায় হাঁটু পর্যন্ত কাঁদা হয়ে যায়। এছাড়াও পাশের মাঠের সব ফসল এই রাস্তা দিয়ে বাড়ি নিতে হয়। এই রাস্তা দিয়েই কৃষি পণ্য বাজারজাত করা হয়। আমাদের এ কষ্ট কবে দূর হবে তার কোনো ঠিক নেই বলে আক্ষেপ করেন তিনি। স্থানীয় শিক্ষক মুজিবর রহমান বলেন, প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। তাদের চলতে খুবই সমস্যা হয়। জুরুরি সেবার কোনো যানবাহন বা যেকোনো গাড়ি গ্রামে প্রবেশ করতে পারে না। অতি প্রাচীনকালের রাস্তাটি পাঁকাকরণ এখন সময়ের দাবি। ওই এলাকার বাসিন্দা মামুনুর রশীদ একই কথা জানান। এবিষয়ে তানোর উপজেলার কলমা ইউপি চেয়ারম্যান খাদেমুন্নবী বাবু চৌধুরী বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর কয়েকটি পাঁকারাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে মাটির কাঁচা রাস্তা পাঁকাকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে নিকট জানানো হবে। এব্যাপারে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিয়াকত সালমান বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাধ্যমে মাটির কাঁচা পাঁকাকরণে আবেদন পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ই/তা
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে