এলাকার সহজ সরল হতদরিদ্র ১২জন মানুষকে বিনামূল্যে সরকারি ঘর, গভীর নলকুপ ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তাদের কাছ থেকে ২০০৫ থেকে ২০১৬ সালের বিভিন্ন সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ছবি ও কাগজে স্বাক্ষর নেয় ওয়ার্ড বিএনপি সহ-সভাপতি সমেয়েল অধিকারী। তিনি ওই সহজ সরল মানুষের স্বাক্ষর নিয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক গৈলা শাখা থেকে ২লাখ ১১ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। ওটাকার সুদবেড়ে দাড়িয়েছে ৩২৯৯১০ টাকায়। স্বনির্ভরের খেলাপি ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য ২০২৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী সোনালী ব্যাংক গৈলা শাখার ম্যানেজার রতন চন্দ্র দে স্বাক্ষরিত নোটিশ ওই ১২জনকে দেওয়া হয়েছে। ঋণের বেড়াজাল থেকে রক্ষা পেতে ভুক্তভোগী ১২ জনে ওই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের কাঠিরা গ্রামে। অভিযুক্ত সমেয়েল অধিকারী উপজেলার গৈলা ইউনয়নের ২নং ওয়ার্ড বিএনপি সহ-সভাপতি।
স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের কাঠিরা গ্রামে বাসিন্দা গৈলা ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি সমেয়েল অধিকারী তিনি ওই গ্রামের বিশ্বেশ্বর সরকারের স্ত্রী পারুল সরকার, নরেন মন্ডলের ছেলে অমল মন্ডল, কালু মন্ডল, অমলেন্দু মন্ডল, স্বপন মন্ডল, নরেন মন্ডলের স্ত্রী সুমতি মন্ডল, অবিনাশ সরকারের স্ত্রী মালতি সরকার, লক্ষ্ণীকান্ত রায়ের ছেলে পুলক রায়, পুলক রায়ের স্ত্রী রেবেকা রায়, মাইকেল ক্ষীতিশ বৈরাগীর ছেলে এ্যাডলপ লাভু বৈরাগী, শ্যামল কান্ত রায়ের ছেলে সতীশ চন্দ্র রায় ও শংকর বাড়ৈর স্ত্রী সুনীতি বাড়ৈ এদেরকে সরকারি ঘর, টিউবওয়েল, সরকারী সাহায্য দেবার কথা বলে ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেয়। ওই কাগজপত্র ও স্বাক্ষর নিয়ে তাদের নামে স্বনির্ভর বাংলাদেশের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক গৈলা শাখা থেকে ২লাখ ১১হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন ওই বিএনপির নেতা সমেয়েল অধিকারী।এখন ওটাকার সুদবেড়ে দাড়িয়েছে ৩২৯৯১০ টাকায়। ২০২৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী সোনালী ব্যাংক গৈলা শাখার ম্যানেজার স্বাক্ষরিত নোটিশ দিলে তারা জানতে পারে তাদের ১২ জনের নামে ২০০৫ থেকে ২০১৬ সালের বিভিন্ন তারিখে স্বনির্ভর বাংলাদেশ থেকে ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। গত ১৩ মে ওই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারিহা তানজিন এর কাছে লিখিত দিয়েছে।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী পারুল সরকার, অমল মন্ডল, কালু মন্ডল, অমলেন্দু মন্ডল, স্বপন মন্ডল, সুমতি মন্ডল, মালতি সরকার, পুলক রায়, রেবেকা রায়, এ্যাডলপ লাভু বৈরাগী, সতীশ চন্দ্র রায়, সুনীতি বাড়ৈ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি নেতা সমেয়েল অধিকারী আমাদের ঘর, টিউবওয়েল, সরকারী সাহায্য সহযোগিতা দেবার কথা বলে ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেয়। তারপরে আমাদের নামে স্বনির্ভর বাংলাদেশ থেকে ঋণের টাকা উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করেন। ২০২৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী সোনালী ব্যাংক গৈলা শাখা ম্যানেজার স্বাক্ষরিত নোটিশ পেলে আমরা বিষয়টি জানতে পারি। আমাদের ১২ জনের নামপ্রতি ২০০৫ থেকে ২০১৬ সালের বিভিন্ন তারিখে ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। আমরা গরীব মানুষ কোথা থেকে আমরা এই টাকা দিমু। টাকা না দিলে পুলিশ নাকি আমাদের ধরে নিয়ে যাবে। আমরা তাই ইউএনও’র কাছে দরখাস্ত দিয়েছি।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক গৈলা শাখার ম্যানেজার রতন চন্দ্র দে বলেন, স্বনির্ভর বাংলাদেশ এর মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। ব্যাংকের রেকর্ডপত্রে ঋণ গ্রহীতাদের ডকুমেন্ট ও স্বাক্ষর রয়েছে। আমি ব্যাংকের কাগজপত্র দেখে ঋণ খেলাপিদের নোটিশ দিয়েছি। ব্যাংকের টাকা আদায়ের জন্য বেস কয়েকজনের নামে মামলা করা হয়েছে। যাদের নামে মামলা হয়নি তাদের নামে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এব্যাপারে অভিযুক্ত সমেয়েল অধিকারী বলেন, আমি একজন রাজনৈতিক করমি। আমার বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করছে। ঋণ গ্রহীতারা আমার গ্রামের মানুষ তারা স্বনির্ভর বাংলাদেশ এর মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে একথা সত্য। কিন্তু এবিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
বিষয়টি সম্পর্কে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারিহা তানজিন বলেন, আইনগতভাবে যাদের নামে ঋণ করা হয়ে তাদেরকেই টাকা পরিশোধ করতে হবে। তবে এর ভিতরে অন্য কিছু থাকলে সেটা সামাজিকভাবে সমাধাণ করতে হবে। আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গৈলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়েছি স্থানীয়ভাবে সমাধাণ করার জন্য।