রাজবাড়ী কৃষি বিপণন কার্যালয়ে অনৈতিকভাবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ

এফএনএস (মেহেদী হাসান মাসুদ, রাজবাড়ী) :
: | আপডেট: ২১ জুন, ২০২৫, ০৬:২২ পিএম : | প্রকাশ: ২১ জুন, ২০২৫, ০৬:২২ পিএম
রাজবাড়ী কৃষি বিপণন কার্যালয়ে অনৈতিকভাবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ

রাজবাড়ী জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কার্যালয়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণ ঘরের জন্য আবেদনপত্র জমা দিতে আসা কৃষকদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ স্বহস্তে আবেদন চাওয়া হলেও অফিসে আসা কৃষকদেরকে আবেদন পত্রের সাথে টাকা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। টাকা না দিলে তিনি আবেদনপত্র রাখেন না। 

১৯ জুন (বৃহস্পতিবার) আবেদনপত্র জমার শেষ দিন ছিল। আবেদনের বাতিলের ভয়ে নিরুপায় হয়ে কৃষকরা কাগপজত্রের সাথে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা টাকা জমা দিতে বাধ্য হয়েছেন। প্রকাশ্যে এসব টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি কর্মকর্তা নাঈম আহমেদ। 

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের দেয়া গণবিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ মে, ২০২৫ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্প (১ম সংশোধিত) এর আওতায় ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে কয়েকটি জেলাসহ রাজবাড়ী জেলার কালুখালী ও বালিয়াকান্দি উপজেলার ২৫ ফুট-১৫ ফুট বিশিষ্ঠ মডেল ঘর বাঁশ, কাঠ, টিন ও আরসিসি পিলার দ্বারা তৈরি ঘর নির্মাণ করা হবে। মডেল ঘর পেতে আগ্রহী পেঁয়াজ ও রসুন চাষীগণকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ২ কপি ছবি ও জমির পর্চা, স্বহস্তে লিখিত আবেদন জেলা বিপণন কার্যালয়ে ১৯ জুন, ২০২৫ তারিখের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়। 

গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী রাজবাড়ী বালিয়াকান্দি উপজেলা ও কালুখালী উপজেলার শতাধিক মডেল ঘরের জন্য আবেদন জমা দেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আবেদন জমার সাথে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে তাদের। 

অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে দেশ রূপান্তরের রাজবাড়ী প্রতিনিধি একটি আবেদনের কপি নিয়ে জেলা বিপণন অফিসে গেলে আবেদন পত্রটি জমা দেওয়ার সময় তার কাছ থেকে ২০০ টাকা চান এক কর্মচারী। পরে তিনি ২০০ টাকা আবেদন পত্রের সাথে জমা দিয়ে আসেন। 


এরপর প্রায় দুই ঘণ্টা এই প্রতিবেদক কার্যালয় ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলেন । বালিয়াকান্দি উপজেলার সোনাপুর গ্রামের এক কৃষক পেঁয়াজ সংরক্ষণ ঘরের জন্য একটি আবেদনপত্র জমা দিতে আসেন। পরে তার কাছে আবেদন পত্র জমা দিতে ৩০০ টাকা দাবি করেন অফিস সহায়ক মো. এনামুল হক।

ওই কৃষক বলেন, ‘আমি পেঁয়াজ সংরক্ষণের ঘরের জন্য একটি আবেদন পত্র জমা দিতে এসেছিলাম। আমার কাছে তিনশ টাকা চেয়েছিল। প্রথমে আমি আবেদন জমা না দিয়ে নিচে এসে আমার ছেলের সঙ্গে কথা বলে পরে আবেদন পত্র জমা দিই। সাথে ২০০ টাকা দেওয়া লাগছে। ‘এই টাকার কোন রশিদ দিয়েছে কি না’ এবিষয়ে ওই কৃষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন রশিদ দেয়নি। ফটোকপিটপি করা লাগবে বলে এই টাকা নিয়েছে।’


নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কৃষক বলেন, আবেদন পত্র জমা নিতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা নিচ্ছে। আমরা কৃষক। খুব একটা বুঝি না। টাকা চেয়েছে। আমরা দিয়ে দিয়েছি। আমরা অত কিছু জানি না। 

ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক কৃষক তার আবেদনপত্রটি অফিস সহায়ক এনামুল হকের কাছে জমা দিয়েছেন। এনামুল হক আবেদন পত্রটি একটি রেজিস্ট্রি খাতায় তথ্য লিপিবদ্ধ করছেন। এসময় ওই কৃষক তার পরিধান করা পাঞ্জাবির পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে হাতের ভেতর রেখেছেন। খাতায় লিপিবদ্ধ করা শেষ হলে হাত পেতে ওই কৃষকের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন অফিস সহায়ক এনামুল হক।

আরেকটি ভিডিওতে আরেক কৃষককের কাছ থেকেও টাকা নিতে দেখা যায়।


রাজবাড়ী কৃষি বিপণন কর্মকর্তা নাঈম আহম্মেদ বলেন, এখানে অনেকেই আবেদন পত্র জমা দিতে আসেন। অফিসের লোকজন দিয়ে অনেকেই আবেদনপত্র লেখাচ্ছেন। এজন্য হয়তো তাদের দু’ একশো টাকা দিচ্ছে। তারপর বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যদি কেউ এই ধরণের কাজ করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত না। যদি এই বিষয়ে কোন টাকা নিয়ে থাকে তাহলে সেই টাকা কেন নিচ্ছে এটা ওই কর্মকর্তাই বলতে পারবে।’

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে