ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান সশস্ত্র উত্তেজনা আরও একধাপ বেড়েছে। শনিবার (২১ জুন) সকালে ইরানের ইস্পাহানসহ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। লক্ষ্য ছিল বিশেষভাবে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো। তেহরান জানিয়েছে, হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইস্পাহানের সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র ধ্বংস করা।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে ফের উত্তেজনার পারদ চড়েছে। যদিও ইরান দাবি করছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত সাড়া দিয়ে পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে, তবে বিশ্লেষকদের মতে, অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধের নতুন ধাপের শুরু হতে পারে এই হামলার মধ্য দিয়ে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র অ্যাভিচাই আদরায়ি সরাসরি ভিডিও ও ছবি প্রকাশ করে বলেন, ইস্পাহানের যেসব স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলো ইউরেনিয়াম রূপান্তর কেন্দ্র ও সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত। তাঁর ভাষায়, “আমরা ইরানের পরমাণু প্রকল্পকে লক্ষ্য করেই ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছি।”
এই সেন্ট্রিফিউজ কারখানাটি ইরানের পরমাণু কর্মসূচির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০০৪ সালে নির্মিত এই কেন্দ্রটিতে পরমাণু জ্বালানির পরীক্ষা ও উৎপাদন করা হয়ে থাকে। ২০০৯ সালে এর একটি জ্বালানি প্রস্তুতকারক ইউনিট চালু হয়, যা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য স্বল্প সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করে।
ইরানি কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হয়, হামলায় কেউ নিহত হয়নি এবং কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হয়নি। ইস্পাহান গভর্নরের ডেপুটি সিকিউরিটি অফিসার আকবর সালেহি জানান, হামলার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেলেও বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পারমাণবিক স্থাপনাগুলো নিরাপদ রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
তবে ওয়াশিংটনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস দাবি করেছে, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ইরানে অন্তত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছে, যার বেশির ভাগই ইসরায়েলি হামলার শিকার।
এই আক্রমণের পাল্টা জবাবে ইরান ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় শহর হোলোনে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে জানানো হয়। সেখানে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তেলআবিবের আকাশেও বিস্ফোরণের শব্দ ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হওয়ার প্রমাণ মিলেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডাম জানায়, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজানো হয়। তবে ইসরায়েলের দাবি, ইরানের ছোড়া পাঁচটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের কোনোটি সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানেনি।
তেলআবিব দাবি করছে, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়ায় তারা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচিকে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ বলেই দাবি করে আসছে। তাদের ভাষায়, ইসরায়েল বিনা উসকানিতে আগ্রাসন চালাচ্ছে এবং এর লক্ষ্য হচ্ছে আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ানো।
বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) এখনো এই হামলা প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে পর্দার আড়ালে উদ্বেগ বাড়ছে।