রাজনৈতিক অচলাবস্থার দীর্ঘ টানাপড়েনের পর নতুন করে আশার আলো দেখছে বিএনপি। শনিবার (২১ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে যেসব বিষয়ে একমত হয়েছে, তাতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আশাবাদ তৈরি হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “গত ১০ মাসে দেশে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তাতে আমরা সন্দিহান হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু তারেক রহমান ও অধ্যাপক ইউনূসের মধ্যে বৈঠকে আমরা যেসব বিষয়ে একমত হতে পেরেছি, সেগুলো আমাদের আশা দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এর মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সফল পরিণতি ঘটবে।”
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যেই ভালো কাজ শুরু করেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি গঠনমূলক পথনির্দেশনা দিচ্ছে। “তাঁদের পথনির্দেশনা অনুসরণ করেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।
সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য গঠনের প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, “অনেকগুলো বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, আবার কিছু বিষয়ে এখনো একমত হতে পারিনি। যেসব বিষয়ে একমত হয়েছি, তা আমরা বাস্তবায়ন করব। আর যেগুলোতে ঐকমত্য হয়নি, সেগুলো নির্বাচন পরবর্তী সংসদে আলোচনা করে সমাধান করব।”
তিনি জানান, এই সংস্কার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিএনপি ৩১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে, যা জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মির্জা ফখরুল ঘোষণা দেন, রোববার (২২ জুন) নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবে। তিনি বলেন, “এই তরুণ নেতৃত্ব আমাদের রাজনৈতিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
বর্তমান ও অতীত সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সুইস ব্যাংকে বিপুল অর্থ জমা হওয়ার খবরে মন খারাপ হয়েছে। এই টাকা কার, কীভাবে গেল—তা অজানা হলেও এটা প্রমাণ করে কতটা লুটপাট হয়েছে দেশে। এটি হয়েছে ফ্যাসিস্ট শাসনের আমলে।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় কাঠামো, নির্বাচনব্যবস্থা, আমলাতন্ত্রসহ সব কিছুই ধ্বংস করেছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার সেগুলোকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা তাদের সহযোগিতা করব।”
গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, “ছাত্র ও জনগণের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে দেশ। এখন সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে কাজ করছি। এটা আমাদের জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি ছিল। আমরা সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।