জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)–এর কাঠামোগত সংস্কার এবং চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের অপসারণ দাবিতে আবারও কলমবিরতির ডাক দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। শনিবার (২১ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে সংগঠনটি।
ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সোমবার (২৩ জুন) ঢাকাস্থ এনবিআরের সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এনবিআর ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতিতে অংশ নেবেন। একই সময়ে দেশের অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তারাও নিজ নিজ কর্মস্থলে এই কর্মসূচি পালন করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি অতিরিক্ত কমিশনার হাসান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, “এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান রাজস্ব সংস্কারে বড় বাধা। তাঁকে রেখে কোনো সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বরং তাঁর মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া বিলম্বিত এবং অস্থিতিশীল করা হচ্ছে।”
ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের প্রতিহিংসামূলক বদলি ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। একদিকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চললেও, অন্যদিকে এনবিআর ভবন ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে উসকানিমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।
১৯ জুন এনবিআরের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের ৬ জন সদস্যের সমন্বয়ে একটি নতুন কমিটি গঠন করে সরকার, যার প্রধান সমন্বয়কারী করা হয় এনবিআর সদস্য (কর, লিগ্যাল ও এনফোর্সমেন্ট) ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকীকে।
তবে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবি, এই কমিটিতে তাদের কোনো প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং আগাম কোনো আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমনকি যাঁরা এর আগে অধ্যাদেশকে স্বাগত জানিয়ে প্রকাশ্যে মত দিয়েছেন, তাঁদেরও এই কমিটিতে রাখা হয়েছে, যা সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সরকার ১২ মে এনবিআরকে বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ এবং ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ জারি করে। এর প্রতিবাদে এনবিআরের অধীন তিনটি শাখা—কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর—একযোগে কলমবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২৫ মে-র এক ঘোষণায় বলা হয়, এনবিআর বিলুপ্ত হচ্ছে না; বরং তাকে স্বাধীন ও বিশেষায়িত বিভাগ হিসেবে রূপান্তর করা হবে। এই ব্যাখ্যার পর ২৬ মে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলেও, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি অক্ষুণ্ণ থাকে।
ঐক্য পরিষদের ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফ্যাসিবাদী সরকারের ‘এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী’ হিসেবে কাজ করছেন এবং তাঁর অবস্থান সংস্কার প্রক্রিয়ার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।