ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা: তেজস্ক্রিয়তা বাড়েনি, জানাল আইএইএ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ২২ জুন, ২০২৫, ০২:২৩ পিএম
ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা: তেজস্ক্রিয়তা বাড়েনি, জানাল আইএইএ

ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পর ওই অঞ্চলে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বেড়েছে কি না—তা নিয়ে চলমান উদ্বেগের মধ্যেই আশ্বাসমূলক তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থাু আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। সংস্থাটি রোববার (২২ জুন) এক বিবৃতিতে জানায়, ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর আশপাশের এলাকায় তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বাড়ার কোনো প্রমাণ তারা পাননি।

আইএইএ জানায়, “বর্তমানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আক্রান্ত স্থানগুলোর পারিপার্শ্বিক অঞ্চলে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধি পায়নি। ইরান থেকে আরও তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংস্থা নতুন করে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে।”

এর আগে শনিবার (২১ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান থেকে পরিচালিত হামলায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায়—ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে—বাংকারবিধ্বংসী বোমা ফেলা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি দাবি করেন, “ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।”

এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও সংবাদ সংস্থাগুলো হামলার সত্যতা স্বীকার করে জানায়,

“এই স্থাপনাগুলো কয়েকদিন আগেই খালি করে ফেলা হয়েছিল। ফলে হামলায় তেজস্ক্রিয় কোনো উপাদান বিনষ্ট হয়নি এবং সাধারণ মানুষের জন্য কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়নি।”

ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (AEOI) এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT) লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক মহলে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় রোববার (২২ জুন) ইসরায়েলের অন্তত ১০টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এসব স্থানের মধ্যে ছিল কারমেল, হাইফা, তেল আবিব এবং উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা। ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএম) জানিয়েছে, এসব হামলায় অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন।

ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) জানিয়েছে, এই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। লক্ষ্যবস্তু ছিল ইসরায়েলের বিমানবন্দর, সামরিক ঘাঁটি, কমান্ড সেন্টার এবং একটি জৈব গবেষণা কেন্দ্র।

এই হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মাত্রা নতুন করে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হামলার মাধ্যমে ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে সম্পৃক্ত হওয়ায় কূটনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি না থাকলেও এমন হামলা পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে যুদ্ধক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত করা এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য হতে পারে। ফলে ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে এই ঘটনা।