ইরানে ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় ১২টি বাংকার-বিধ্বংসী বোমা ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ২২ জুন, ২০২৫, ০৪:১৭ পিএম
ইরানে ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় ১২টি বাংকার-বিধ্বংসী বোমা ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই শনিবার (২১ জুন) রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এই হামলায় ব্যবহার করেছে তাদের সর্বাধুনিক বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান ও ওহাইও ক্লাস সাবমেরিন। ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান—এই তিনটি কেন্দ্র ছিল হামলার প্রধান লক্ষ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এই হামলার বিষয়টি সরাসরি নিশ্চিত করেছেন। একইদিনে ইরানের পক্ষ থেকেও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়। তবে তেহরান দাবি করেছে, এসব স্থাপনায় তেজস্ক্রিয়তা সৃষ্টি করার মতো কোনো উপাদান ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান ইরানের ভূগর্ভস্থ ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালায়। এসব বিমান থেকে মোট ১২টি ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ফেলা হয়। প্রতিটি বোমার ওজন প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড বা ১৫ টন। এই বোমাগুলো ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ (এমওপি) নামে পরিচিত, যা ভূগর্ভস্থ বাংকার ধ্বংসে ব্যবহৃত হয়।

ফোরদো কেন্দ্রে দুটি প্রবেশপথ ও একটি ভেন্টিলেশন শ্যাফট লক্ষ্য করে এই বোমাগুলো ফেলা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এছাড়া, মার্কিন নৌবাহিনীর সাবমেরিন থেকে ইরানের নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর উদ্দেশে ৩০টি টিএলএএম (টমাহক ল্যান্ড অ্যাটাক মিসাইল) ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ওহাইও ক্লাস সাবমেরিনের নাম নিশ্চিত করা হয়নি, তবে সামরিক সূত্রগুলো সেই সম্ভাবনাই উঁচু করে ধরছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নাতাঞ্জে আরও একটি বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দুটি বাংকার বিধ্বংসী বোমা ফেলেছে। ফলে পুরো অভিযানে আকাশ ও সমুদ্র—দুই দিক থেকেই সমন্বিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে।

ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (এইওআই) এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং এনপিটি (পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি) বিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ এক কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে, হামলার শিকার স্থাপনাগুলোতে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর মতো কোনো উপাদান ছিল না।

এই হামলা ইসরায়েল-ইরান চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িত হওয়ার প্রথম বড় উদাহরণ। ইসরায়েল ১৩ জুন ইরানে হামলা চালায়, যার জবাবে ইরানও পাল্টা হামলা চালায়। সেই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলেছে।