মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে উত্তেজনার মধ্যেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরান সরাসরি সামরিক আঘাত হেনেছে তাদের সর্বাধুনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘খাইবার’ দিয়ে। এই হামলায় ইরান প্রথমবারের মতো ব্যবহার করেছে তাদের নিজস্ব উৎপাদিত খোররামশহর-৪, যা ‘খাইবার’ নামে পরিচিত। রোববার (২২ জুন) ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) এই হামলার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে।
ইরান জানিয়েছে, ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ–৩’-এর আওতায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এটি ছিল ২০তম হামলা। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোর্দো, নাতানজ ও এসফাহান-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার দাবি করে। এর প্রতিক্রিয়াতেই এই প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে আইআরজিসি।
এই হামলায় তেল আবিব ও হাইফাসহ ইসরায়েলের একাধিক স্থানে আঘাত হানে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো। স্থানীয় ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে বেশ কয়েকটি স্থাপনায় আগুন ধরে যায় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তেল আবিবের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানা হয় বলেও দাবি করে ইরান।
‘খাইবার’ ইরানের খোররামশহর ক্ষেপণাস্ত্র সিরিজের চতুর্থ প্রজন্ম বা ফোর্থ জেনারেশন সংস্করণ। এটি একটি মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যার পাল্লা ২ হাজার কিলোমিটার এবং এটি ১ হাজার ৫০০ কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহনে সক্ষম।
এই ক্ষেপণাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. তরল জ্বালানিচালিত হওয়ায় এটি উড়ন্ত অবস্থাতেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
২. এটি বায়ুমণ্ডলের বাইরে থেকে নিজের গতিপথ পুনঃনির্ধারণ করতে সক্ষম।
৩. ক্ষেপণাস্ত্রটির সর্বোচ্চ গতি বায়ুমণ্ডলের বাইরে ম্যাক ১৬ (শব্দের গতির ১৬ গুণ), আর বায়ুমণ্ডলের ভেতরে ম্যাক ৮।
৪. প্রচলিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আটকানো অত্যন্ত কঠিন।
এই হামলার মাধ্যমে ইরান শুধু সামরিক শক্তির প্রদর্শন নয়, বরং একটি রাজনৈতিক বার্তাও দিতে চেয়েছে—ইসরায়েলের অধিকৃত অঞ্চলে ‘কোনো নিরাপদ স্থান থাকবে না’, যা আগেই ইরান সতর্ক করেছিল। এমন হামলার মাধ্যমে তারা তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।