মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে বড় ধরণের অস্থিরতা তৈরি করে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ নামে চালানো এই অভিযানে অংশ নেয় যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক বি–২ স্টেলথ বোমারু বিমানসহ ১২৫টির বেশি আকাশযান। শনিবার (২১ জুন) রাতের এই হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার (২২ জুন) এক পোস্টে জানান, অভিযানে অংশ নেওয়া পাইলটরা নিরাপদে যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি ঘাঁটিতে ফিরে এসেছেন।
ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘দারুণ দক্ষ বি–২ পাইলটরা এখনই নিরাপদে মিজৌরিতে অবতরণ করেছেন। দারুণ কাজের জন্য ধন্যবাদ!’
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে পরিচালিত এই হামলায় সাতটি বি–২ বোমারু বিমান অংশ নেয়। এসব বিমানের প্রতিটিতে ছিল দুটি করে বাংকারবিধ্বংসী বোমা, যেগুলোর প্রতিটির ওজন ৩০ হাজার পাউন্ড। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এই বোমাগুলোই ইরানের মতো ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ধ্বংসে সক্ষম।
এ অভিযানে আরও অংশ নেয় নজরদারি ড্রোন, আকাশে জ্বালানি ভরার ট্যাংকার উড়োজাহাজ ও যুদ্ধবিমানসহ মোট ১২৫টির বেশি উড়োজাহাজ। হামলায় ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
হামলার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমান খুব সফলভাবে এই তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে এবং এর মধ্যে ফর্দো স্থাপনাটি ‘ধ্বংস’ হয়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন। একইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, তেহরান যদি শান্তির পথে না আসে, তাহলে আরও হামলা চালানো হবে।
তবে তেহরান হামলার বিষয়টি স্বীকার করলেও এর ভয়াবহতা নাকচ করেছে। ইরানের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে ফর্দো স্থাপনাটি আগেই খালি করে ফেলা হয়েছিল। তাই ‘মারাত্মক কোনো’ ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’ হিসেবে উল্লেখ করে একে ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক সংঘাতে অংশগ্রহণ করেছে, যা আরও অস্থিরতা এবং উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে। বিশেষ করে ইরান–ইসরায়েল সম্পর্কের চলমান টানাপোড়েনে এই ঘটনা নতুন মাত্রা যোগ করল।