জানুন কীভাবে কাজ করে মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ২৪ জুন, ২০২৫, ০৫:০৭ পিএম
জানুন কীভাবে কাজ করে মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘর্ষ, বিশেষ করে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি হামলার প্রেক্ষিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছে মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। আকাশপথে ছোঁড়া রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথে ধ্বংস করতে সক্ষম এই ব্যবস্থাকে এখন বলা হয় আধুনিক যুদ্ধের রক্ষাকবচ। বিবিসি ও আল জাজিরা প্রকাশিত একাধিক বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, এই প্রযুক্তি যুদ্ধক্ষেত্রে শহর ও জনজীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যপদ্ধতি
একটি মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মূলত তিনটি ধাপে কাজ করে:

ক) শনাক্তকরণ ও ট্র্যাকিং:
শত্রুপক্ষ যখন মিসাইল উৎক্ষেপণ করে, তখন রাডার, উপগ্রহ বা সেন্সর সেটি শনাক্ত করে। দ্রুতগতির এই অস্ত্র কোন দিকে যাচ্ছে, কত উচ্চতায় ও কোন গতি নিয়ে চলছে, এসব তথ্য মিলেই নির্ধারিত হয় আঘাতের লক্ষ্যবিন্দু।

খ) বাধা প্রদান:
যখন লক্ষ্য নির্দিষ্ট হয়, তখন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় ইন্টারসেপ্টর মিসাইল, যা শত্রু মিসাইলের সঙ্গে আকাশেই সংঘর্ষ ঘটিয়ে তাকে ধ্বংস করতে চায়।

গ) ধ্বংস:
ইন্টারসেপ্টর মিসাইল হয় শত্রু মিসাইলে সরাসরি আঘাত করে, নয়তো কাছাকাছি গিয়ে বিস্ফোরিত হয়ে তাকে নিষ্ক্রিয় করে।


বিশ্বের আলোচিত মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

১। আয়রন ডোম (Iron Dome) — ইসরায়েল:
বিবিসি জানিয়েছে, এই স্বল্প পাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয় কোন রকেট জনবহুল এলাকায় আঘাত হানতে পারে, এবং সেই অনুযায়ী প্রতিরোধ করে। ইসরায়েলে এটি বহু হামলার সময় বেসামরিক প্রাণহানি রোধে সফল হয়েছে।

২। প্যাট্রিয়ট সিস্টেম (Patriot) — যুক্তরাষ্ট্র:
মাঝারি ও দীর্ঘ পাল্লার এই ব্যবস্থা একাধিক মিসাইলকে একই সঙ্গে লক্ষ্য করতে পারে। ৩৬০ ডিগ্রি রাডার কভারেজ থাকায় এটি একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি হিসেবে পরিচিত।

৩। এস-৪০০ (S-400) — রাশিয়া:
রাশিয়ার এই উন্নত ব্যবস্থা ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে থাকা লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত ও ধ্বংস করতে পারে। এটি উচ্চগতির ব্যালিস্টিক মিসাইল ও যুদ্ধবিমান উভয়ের বিরুদ্ধেই কার্যকর।

৪। থাড (THAAD) — যুক্তরাষ্ট্র:
এই ব্যবস্থা উচ্চমাত্রায় ছোঁড়া ব্যালিস্টিক মিসাইল ধ্বংসে ব্যবহৃত হয়। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে আকাশে হুমকি মোকাবেলায় এটি ভূমিকা রাখে।

প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ

১। শতভাগ সফলতা সম্ভব নয়:
একসঙ্গে যদি বহু মিসাইল ছোড়া হয়, তবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে সবগুলোকে প্রতিহত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

২। অতিমাত্রায় ব্যয়বহুল:
একটি ইন্টারসেপ্টর মিসাইলের দাম লাখ থেকে শুরু করে কোটি ডলার পর্যন্ত হতে পারে, যেখানে শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্রের খরচ অনেক কম।

৩। সময় অত্যন্ত সীমিত:
শত্রু মিসাইল শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে অনেক সময় মাত্র ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড সময় পাওয়া যায়। সিদ্ধান্ত ও প্রতিক্রিয়ায় এক মুহূর্তের বিলম্ব বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

ভবিষ্যতের দিগন্ত
বিশ্বব্যাপী উন্নত প্রযুক্তি যেমন হাইপারসনিক মিসাইল, ড্রোন ও লেজার অস্ত্রের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও বিবর্তিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, ইসরায়েলসহ অনেক দেশ এই প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় জড়িয়েছে। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও লেজার প্রযুক্তি এই ব্যবস্থাকে আরও নির্ভুল ও দ্রুততর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখন কেবল সেনাবাহিনীর একটি অস্ত্র নয়, বরং তা একটি দেশের অস্তিত্ব রক্ষার অপরিহার্য প্রযুক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সীমাবদ্ধতা, ব্যয় এবং প্রযুক্তিগত জটিলতা মিলিয়ে এটি একমাত্র সমাধান নয়। টেকসই প্রতিরক্ষার জন্য কৌশলগত প্রস্তুতি ও কূটনৈতিক দক্ষতা সমানভাবে প্রয়োজন।