আল্লাহ তা’আলা মানবজাতিকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি হিসেবে তাঁরই ইবাদতের জন্য প্রেরণ করেছেন। জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য মাঠে-ময়দানে ছড়িয়ে পড়ারও নির্দেশ দিয়েছেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা। এজন্য মানবজাতি প্রতিনিয়ত জীবিকার তরে ঘুরে বেড়াচ্ছে দেশ দেশান্তর। প্রচেষ্টা আর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও সুপারিশের মধ্যে রয়েছে কল্যাণ ও সফলতা। পৃথিবীর বয়স যতই বাড়ছে; মানুষ ততই ধন-সম্পদের মালিক হচ্ছে এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে; সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়ছে। কর্ম প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে মানুষের আয়-রোজগার বাড়ছে। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য এবং মৌলিক চাহিদা অনুপাতে শ্রমিক সমাজ শ্রমের মূল্য পাচ্ছেনা। অথচ শ্রমের মূল্যের চেয়েও শত গুণে বেশি লাভবান হচ্ছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ। জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু তাঁর গানের সুরে বলেছিলেন,
‘‘এক পুরুষে করে ধন, এক পুরুষে খায়,
আরেক পুরুষ এসে দেখে, খাওয়ার কিছু নেই,
আমরা তিন পুরুষ....।’’
শ্রমিকের রক্ত ও ঘামের উপর দাঁড়িয়ে এ পৃথিবীতে কোন ব্যক্তি র্দীঘ সময় টিকে থাকতে পারেনি। বরং যাঁরা শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রদান করেছেন, তাঁরা এখনোও প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে টিকে আছে। তন্মধ্যে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ‘আকিজ গ্রুপ’ অন্যতম। এটির প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৪০ ইংরেজি। সৎ ব্যবসায়ীদের আল্লাহ তা’আলা পুরষ্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং অসৎ ব্যবসায়ীদের জন্য কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির বিধান সুনিশ্চিত করেছেন ইহকাল ও পরকালে। বিশ্ব মানবতার মুক্তির কাণ্ডারী রাহমাতাল্লিল আলামিন, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘‘তোমরা শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করো, তাঁর ঘাম শুকানোর আগে।’’ আরা যারা শ্রমের মজুরি পরিশোধে তালবাহানা করে তাদের কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ‘‘জালিম’’ বলে সতর্ক করেছেন। জালিম শুনে না ধর্মের কাহিনী; না শুনে মহাত্মার বাণী। পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যালেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আমরা প্রতিনিয়ত সংবাদ মাধ্যমে লক্ষ্য করেছি যে, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি ও অধিকার আদায়ে বিশ্ব দরবারে আন্দোলন হচ্ছে। বিশ্ব পরিসংখ্যান বলছে, ‘‘বিশ্বের নানা প্রান্তরে প্রতিদিন; অধিকার আদায়ে শ্রমিক সমাজ আন্দোলন করছে এবং প্রতিদিন অসংখ্য শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করছে’’।
আমরা নিজেদেরকে যতই আধুনিক ও সভ্য জাতি হিসেবে বলে বেড়ায় না কেন আমরা প্রতিনিয়তই অন্যের অধিকার হরণ করছি। এখন আসি, পহেলা মে সর্ম্পকে, আট ঘন্টা কর্ম ঘন্টা রাখার দাবিতে আমেরিকার শিকাগো শহরে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন হয় ১৮৮৬ সালের পহেলা মে। আজ প্রায় ১৩৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এ আন্দোলন এখনোও চলমান। পরিসংখ্যানে বলছে, দেশের শ্রমিকরা প্রতিদিন গড়ে ১২ ঘন্টা কাজ করে, পরিবহন শ্রমিকরা ১৫ ঘন্টা কাজ করে। ২০২৩ সালে ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল’ বাংলাদেশের (টিআইবি) এক জরিপে দেখা যায়, দেশের প্রায় ৬৫ শতাংক পোশাক কর্মী দিনে গড়ে ১০ ঘন্টা বা তার বেশি সময় কাজ করে। বাংলাদেশে শ্রম আইন মতে, ‘‘সপ্তাহে শ্রমিককে ৪৮ ঘন্টা কাজ করাতে পারবে তবে শর্ত সাপেক্ষে।’’
এ আইন কয়জনে মানে? অথচ বেসরকারী ব্যাংক গুলোতে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অফিস করতে হয়। বাংলাদেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী, গার্মেন্টস শ্রমিক। দেশে তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের বেতন গ্রেড, ১ম গ্রেড চৌদ্দ হাজার সাতশত পঞ্চাশ টাকা, ২য় গ্রেড চৌদ্দ হাজার একশত পঞ্চাশ টাকা, ৩য় গ্রেড তের হাজার পাঁচশত পঞ্চাশ টাকা, ৪র্থ গ্রেড তের হাজার পঁচিশ টাকা, ৫ম গ্রেড বার হাজার পাঁচশত টাকা। বর্তমান সময়ে এ বেতনে দিয়ে একটি পরিবার খুব ভালভাবে চলতে পারেনা।
এক কথায় এদের সাথে জুলুম করা হচ্ছে। কারণ অধিকাংশ পোশাক শ্রমিক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ১২ ঘন্টা ডিউটি করে। এজন্য অনেকের পা ফুলে যায় এবং শারীরিক অসুস্থতায় ভোগে। তাঁরা দিনের আলো ঠিকমত দেখেনা। আমার মনেহয় সবচেয়ে কষ্টের কাজ হচ্ছে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাজ। এ যাবৎ পত্র-পত্রিকার পাতায় দেখেনি এবং জনমুখে শুনিনি যে, কোন পোশাক শিল্প মালিক দেউলিয়া হয়ে ফকির হয়েছে। তবে অদক্ষতা এবং পলিসিগত জটিলতায় শিল্প-প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হলে সেটা ভিন্ন বিষয়। একজন বাস চালক মাসে ২২,০০০-৩০,০০০ টাকা এবং হেলপার মাসে ১৮,০০০-২০,০০০ টাকা, রিকসা চালক মাসে ১৫-৩০ হাজার টাকা যদি ইনকাম করতে পারে তাহলে পোশাক শ্রমিকের শ্রম মূল্য কত হতে পারে? পথ শিশু শ্রমিক যাদের বয়স ১০-১৬ বছর, এদের অধিকাংশই অনাথ এবং পরিবারহীন।
যারা রাস্তার দ্বারে বা রেল স্টেশনে ঘুমায়; এসমস্ত নিরহ শিশুদের দিয়ে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরণের কাজ করিয়ে থাকে; অথচ এদের ন্যায্য মজুরি প্রদান করেনা। এটি অমানবিক। এ সমস্ত পথশিশুদের আবাসন ব্যবস্থা, পড়াশুনা সহ একজন আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য। শ্রমজীবিদের আসলে কোন অভিভাবক নেই, আছে শুধুমাত্র সিন্ডিকেট বাণিজ্য। এ সমস্যা গুলো নিরসন করা সময়ের দাবি। কারণ এ ধরণের সমস্যার মধ্যদিয়ে একটি জাতি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনা। মোদ্দাকথা বাংলাদেশে আইন আছে, প্রয়োগ নেই। যতই আন্দোলন, সংগ্রাম হোক না কেন! দিন শেষে ফলাফল শূন্য। এ দেশে নির্দিষ্ট পেশাজীবি ছাড়া অন্যান্য শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নেই বললে চলে। শ্রমজীবিদের শ্রম অনুপাতে মজুরি প্রদানের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এখনোও সরকার প্রণয়ন করতে পারেনি। যেমন, একজন রিকসা চালক কত কিলোমিটার পথ যাত্রায় কত টাকা মজুরি বা ভাড়া নিবে? বড়লোকেরা দিনদিন সম্পদের পাহাড় গড়ছে। শ্রমিকরা ডাল, ভাত খেয়ে দিনাপাত করছে। আট কর্ম ঘন্টার মধ্যেও ৯-১২ ঘন্টা পর্যন্ত শ্রম নিচ্ছে, মালিক পক্ষ। কিন্তু শ্রম অনুপাতে বেতন নেই। বাংলাদেশের অধিকাংশ কোম্পানী শ্রমিকদের চিকিৎসা খরচ, আবাসন খরচ, যাতায়াত খরচ দিবে দূরের কথা ঠিক মত ন্যায্য মজুরিও প্রদান করছেনা।
অথচ এ সমস্ত কোম্পানীগুলো প্রতিদিন কোটিকোটি টাকার বাণিজ্য করে যাচ্ছে। এমনকি বহু প্রতিষ্ঠান সরকারি প্রণোদনা ভোগ করে থাকে এবং ট্যাক্সের টাকা মওকুফের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকারি আয়করও মাফ করে থাকে। তারপরও শিল্পপতিরা সময় মত বেতন ও বোনাস পরিশোধ করেনা নানা অজুহাতে। শ্রমিকের বেতন তো কারো করুণা বা দয়া নয়, কায়িক শ্রম ও ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের বিনিময় মাত্র। সর্বশ্রেষ্ঠ ‘শিক্ষক’ পেশাতেও রয়েছে বেতন বৈষম্য। শিক্ষকদের পদমর্যাদার ভিত্তিতে নিম্মস্তরের কর্মচারীতের বেতন অতি সামান্য; এ বেতনে একজন শিক্ষক; সমাজে মাথা উচুঁ করে দশজনের সাথে চলতে পারেনা। চিকিৎসা পেশা একটি মহৎ পেশা। এ পেশায় যারা নিয়োজিত আছেন, অধিকাংশই জনগণের টাকায় মেডিকেল পাশ করেছে অথচ এরাই প্রতিনিয়ত পকেট মারছে; হাজার হাজার মানুষের। এদের চড়া দামের ভিজিটের পাশাপাশি রিপোর্ট বাণিজ্য, ঔষধ বাণিজ্য চোখে পড়ার মত।
এদের এক একজনের প্রতিদিনের আয় প্রায় লক্ষাধিক। তবে অসৎ চিকিৎসকের সংখ্য খুবই নগন্য; এরাই প্রকৃত সেবক। আইনজীবিও একই পথের পথিক। সাংবাদিকদের একটি বিরাট অংশ সামান্য বেতনে চাকুরি করে; তবে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দল ও মতাদর্শের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী সাংবাদিকদের উন্নত জীবনমান এবং ধন-সম্পদের অঢেল পাহাড় চোখে পড়ার মত। লেখক সমাজ; মেধা ও প্রতিভাগুণে সমাজ ও রাষ্ট্রের নানান কুসংস্কার ও অসংগতি দূর করতে কলম সৈনিক হিসেবে কাজ করে থাকে অথচ এদের জন্য সরকারিভাবে তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা নেই, যতটুকু সরকারি প্রণোদনা আছে তা সিন্ডিকেটদের পকেটে চলে যায়। তবে মনুষ্যত্বহীন ও স্বার্থন্বেষী লেখক ও সাংবাদিক সাফল্যের সর্ব শিখরে থাকে সবসময়। আবার এদের করুণ দশা দেখেছি, ২৪-এর জুলাই বিপ্লবের পর।
অধিকাংশ পত্রিকার মালিক, প্রকাশক এবং সম্পাদক সুর্নিদিষ্ট প্রতিনিধি ছাড়া জেলা এবং থানা প্রতিনিধিদের সামান্যতম বেতনও প্রদান করেনা। অথচ তাঁরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত সংবাদ সংগ্রহ করে যাচ্ছে। সম্পাদকীয় পাতায় যাঁদের লেখা ছাপা হয় তাঁদেরকেও ঠিকমত সম্মানি পরিশোধ করেনা। এজন্য দিন দিন সুলেখকের সংখ্যা কমছে। অথচ বিজ্ঞাপন, পত্রিকা বিক্রয় এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিনিয়তই লাখ লাখ টাকা আয় করছে, মালিক পক্ষ। সৈনিকদের বেতন ও সুবিধা বর্তমানে মানানসই। ব্যাংক সেক্টরেও বেতন বৈষম্য রয়েছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলে, এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কৃষি পেশা মূলত- চেষ্টা ও ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল। কৃষকদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত সুযোগ-সুবিধা রাঘব বোয়ালের পেটে চলে যায়। কৃষক সামান্যতম ভোগ করতে পারে। অনেক সময়, রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পূঞ্জীভূত রাখতে বাজার নিয়ন্ত্রণের নামে কাঁচামালের দাম কমিয়ে দিয়ে কৃষকের পেটে লাথি মারে। সাম্প্রতিক, কৃষক সমাজ ন্যায্য বাজার ধর না পাওয়ার কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সরকারের উচিত, এ সমস্ত কৃষকদের ঋণ পরিশোধে সহায়তা প্রদান করা। বাজার সিন্ডিকেটের কথা নাই বললাম, কারণ সিন্ডিকেট মূলত সরকারি দলের একটি অংশ বিশেষ। কিছু অসাধু চক্রের কারণে চলচ্চিত্র, নাটক, চিত্রনাট্য এক কথায় বিনোদন জগতের মানুষগুলোও সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দোকানদাররা, বর্তমানে অতিরিক্ত লাভে পণ্য বিক্রয় করছে। যেমন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কয়েকটি আড়ৎ-এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী আড়ৎ অন্যতম।
আড়ৎ-তে একটি কদুর নাম যদি বিশ টাকা হয়, সে কদু বাজারে ৫০-৭০ টাকা। মুরগীর সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে কাপ্তান বাজার; এ বাজারে মুরগীর প্রতি কেজির দাম ১৫০ টাকা হলে, সে মুরগীর খুচরা বাজার মূল্য ১৭০-২০০ টাকা। এসব কাজে চাঁদাবাজিও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এখানে এ কথাগুলো বলার কারণ হচ্ছে, এ দেশে একদিকে যথাযথ শ্রম মূল্য নেই; আছে শুধু ব্যবসায়ী সমাজের অতিমাত্রা জুলুম! নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রেণী ছাড়া এদেশের শ্রমিকদের কোন ধরণের ভবিষৎ নেই বললে চলে। তন্মধ্যে- আমলা, প্রশাসন, প্রশাসক, ব্যাংকার, আইনজীবি, সরকারি চাকুরিজীবি। সরকারের উচিত, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ম ঘন্টা, বেতন ভাতা, সুবিধা ও অধিকার সুনিশ্চিত করা। বাংলাদেশের বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, দিনের কাজ দিনে শেষ করতে পারলে সরকারি দাপ্তরিক কাজগুলো কেন নয়? উদাহরণ স্বরূপ- একজন ব্যাংকার দিনের কাজ দিনে শেষ করলে পারলে; সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দিনের কাজ দিনে শেষ করতে পারেনা কেন? কারণ হিসেবে বলতে গেলে প্রধানতম কারণ হল, ঘুষ ও দুর্নীতি।
একটি প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হল, পিয়ন। অথচ সবচেয়ে বেশি দৌড়াদৌড়ি এবং পরিশ্রমের কাজ করে এ মানুষটি! কিন্তু বেতন ও সুবিধার বেলায় সবচেয়ে কম। বাংলাদেশ একটি ইসলাম প্রধান দেশ। অথচ এদেশের মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং খাদেমের বেতন অতি সামান্য; অর্থাৎ- পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে কিছু কিছু মসজিদে ভাল মানের বেতন প্রদান করে থাকে। সাম্প্রতিককালে, গাজীপুর মসজিদের ইমাম মাওলানা রইস উদ্দীনকে দুই মাসের বেতন পরিশোধ না করে উল্টা একটি মিথ্যা অভিযোগ এনে মব জাস্টিসের ভিত্তিতে; অমানবিক শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে! এজন্য সচেতন মুসলিম নাগরিকদের উচিত ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং খাদেমদের যথাযথ সম্মান ও সম্মানি প্রদান করা। আরেকটি উদ্ভট পেশার নাম হল, গবেষণা। এ পেশাটি অধিকাংশ মানুষ গ্রহণ করে বিবেকের তাড়নায়। এ মানুষগুলো একটি জাতিকে বিশ্বে দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করে। তবে এদের জন্য সরকারিভাবে কোন ধরণের সুযোগ সুবিধা নেই। পহেলা মে ২০২৫, দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার ফেইসবুক ওয়ালে বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের পদের নামগুলো দিয়ে একটি ব্যানার পোষ্ট করেছে। সেখানে লিখেছে, ‘পরিচয় ভিন্ন, মর্যাদা নয়। সম্মান হোক সবার জন্য সমান। এগুলো অনেকের গবেষণার কাজে লাগতে পারে।
এজন্য পদমর্যাদাগুলো এখানে তুলে ধরা হল- শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিক, লেখক, পুলিশ, সৈনিক, অগ্নিনির্বাপক, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, কৃষক, নির্মাণ শ্রমিক, ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক, ড্রাইভার, রিসেপশনিস্ট, গ্রাফিক ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার, অভিনেতা, সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, মডেল, ওয়েব ডেভেলপার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট, শিক্ষক সহকারী, গবেষক, ব্যাংক অফিসার, বীমা এজেন্ট, বিক্রয় প্রতিনিধি, মানব সম্পদ কর্মকর্তা, প্রকল্প ব্যবস্থাপক, রেস্টুরেন্ট ব্যবস্থাপক, রাঁধুনি, ব্যারিস্টার, পরিবেশনকারী, ট্যাক্সিচালক, পাইলট, ফ্লাইট ক্রু, নাবিক, ক্যাপ্টেন, দর্জি, ডিজাইনার, মালি, নিরাপত্তারক্ষী, দোকানদার, ফার্মাসিস্ট, নার্স, চিকিৎসা সহকারী, দন্ত চিকিৎসক, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, ফিজিওথেরাপিস্ট, পশু চিকিৎসক, ডেলিভারি রাইডার, ক্রীড়াবিদ, কোচ, রেফারি, শরীরচর্চা প্রশিক্ষক, ট্যুর গাইড, ট্রাভেল এজেন্ট, ইভেন্ট ম্যানেজার, পরিবেশ বিজ্ঞানী, ভূতত্ত্ববিদ, আবহাওয়াবিদ, জীববিজ্ঞানী, পদার্থবিদ, রসায়নবিদ, গণিতবিদ, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী, অনুবাদক, সম্পাদক, প্রকাশক, চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, কার্টুনিস্ট, কারিগর, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার, অ্যাকাউন্ট্যান্ট, অডিটর, ট্যাক্স কনসালটেন্ট, ইউটিউবার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, ডেটা এনালিস্ট, সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ, সফটওয়ার টোস্টার, গেম ভেভেলপার, মেকআপ আর্টিস্ট, হেয়ার স্টাইলিস্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, রিসার্চ এনালিস্ট, পিয়ন, কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধি, লাইব্রেরিয়ান, গার্মেন্টসকর্মী, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার, প্রিন্টার অপারেটর, ভিডিও এডিটর, অ্যানিমেটর, ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনার, কল সেন্টার এজেন্ট, ফ্রিল্যান্সার, ই-কমার্স উদ্যোক্তা, রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, প্রপার্টি ডিলার, সিকিউরিটি গার্ড, ট্রাকচালক, রিকশাচালক, পান ব্যবসায়ী, মাছ ব্যবসায়ী, মাংস ব্যবসায়ী, কাঠমিস্ত্রি, লোহা মিস্ত্রি, ভ্যানচালক, কুলি, পান বিক্রেতা, নাপিত, কুমার, কামার।
বাংলাদেশ সরকারের উচিত, সকল পর্যায়ের বেতন বৈষম্য দূর করা এবং প্রতিটি জনগণের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, প্রতিটি থানায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা, উন্নত বিশ্বের মত প্রতিটি জনগণের অধিকার ও সুবিচার নিশ্চিত করা, কর্মক্ষম জনগণের জন্য বেতনের ব্যবস্থা করা, উচ্চ পর্যায়ের চাকুরিজীবি থেকে শুরু করে গ্রামের দিনমজুরদের জন্য অবসরকালীন বেতন চালু করা। বৈশ্বিক শ্রম বাজার এবং বাংলাদেশের শ্রমবাজার বিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা সময়ের দাবি। আসুন, আমরা সোনার বাংলা মুখে মুখে না বলে বাস্তবে রূপ দেয়। এটি হোক, শ্রম বিপ্লবের স্লোগান।
লেখক: কলামিস্ট ও গবেষক