সৈয়দপুরে সচল রেললাইনে বাঁশের হাট দুর্ঘটনার আশংকা

এফএনএস (আব্দুর রাজ্জাক, নীলফামারী) : | প্রকাশ: ২৫ জুন, ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম
সৈয়দপুরে সচল রেললাইনে বাঁশের হাট দুর্ঘটনার আশংকা

নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেললাইনের উভয় পাশে এখল বসে দোকান পাট। এক নম্বর রেল ঘুনটি হয়ে দুই নম্বর রেল ঘুনটি পর্যন্ত রেললাইন এখন পুরোটাই অবৈধ দখলবাজদের আওতায়। সরাসরি রেললাইনে বসে কাপড় দোকান, জুতা স্যান্ডেল দোকান, ফলের দোকানসহ বিভিন্ন দোকান। তবে এবার যুক্ত হয়েছে রেললাইনে বাঁশের হাট। দখলবাজদের কারণে যে কোন সময় ঘটতে পারে ট্রেন দুর্ঘটনা। এতে হতে পারে প্রানহানির ঘটনা এমন আশংকা শহরবাসির। রেলপথ পরিচ্ছন্ন রাখতে দায়িত্বে আছেন রেলওয়ে পুলিশ ও পিডাব্লিউ নামে রেলওয়ের দুই প্রশাসন। দীর্ঘদিন থেকে রেললাইন দখলে নিয়ে দোকানপাট বসলেও তারা রয়েছে নিশ্চুপ। একটি সুত্র জানায়, রেলওয়ের বিধি অনুযায়ী রেলপথের দুই পাশে ৫০ ফুটে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। 

 সৈয়দপুর রেলপথের পাশে বাঁশের হাটের পাশাপাশি দোকানপাটসহ অন্যান্য স্থাপনাও রয়েছে। গত এক বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে কয়েকজন প্রাণও হারান। তবু রেলওয়ে ও স্থানীয় প্রশাসন এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

রেলওয়ের সৈয়দপুর পূর্ত বিভাগের উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী বলেন, রেলওয়ে বিধি অনুযায়ী, যেকোনো রেলপথের উভয় পাশে ৫০ ফুট করে জায়গা সংরক্ষিত রাখতে হবে। এই অংশে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এমনকি জনমানুষের চলাচলও নিয়ন্ত্রিত থাকবে।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলস্টেশনের মাস্টার বলেন, সৈয়দপুর দিয়ে যাওয়া রেলপথে প্রতিদিন ৮টি ট্রেন চলাচল করে। ট্রেনের চালকেরা রেলপথ নিরাপদ রাখার জন্য বারবার তাগিদ দিচ্ছেন। রেলপথের উভয় পাশের স্থাপনা, দোকানপাট ও হাটবাজার উচ্ছেদের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর আগে কয়েকবার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও তা আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। সম্প্রতি রেলপথ দখল রোধে উভয় পাশে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে বাউন্ডারি হিসেবে লোহার রেললাইন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। যাতে এ সীমানার বাইরে বা ভিতরে কেউ কোন জায়গা দখল করতে না পারে। কিন্তু এতে কোন কাজ হয়নি। এখন দেখা যায়,সীমানার বাহিরে এবং ভিতরে আবার দখলবাজরা স্থাপনা নির্মাণ করে বসে আছে। ট্রেন আসা যাওয়ার সময় দেখা যায় এদের মালামাল সরানো নিয়ে ছুটাছুটি।

সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরহাত আহমেদ জানান,আমরা বারবার রেলপথ  থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু কিছুদিন পর আবার পুর্বের অবস্থা বিরাজ করে। এদিকে সীমানাপ্রাচীর দিয়েও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। 

রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারি আব্দুল বারী জানান, সৈয়দপুর থেকে ঢাকা, সৈয়দপুর-খুলনা ও রাজশাহী রেলপথ। সৈয়দপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে বানিয়াপাড়া আউটার সিগন্যাল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রেলপথ এলাকা পর্যায়ক্রমে দখল হয়ে যাচ্ছে। রেলপথের দুই পাশে ভবন, দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। রেলপথের ১০ ফুটের মধ্যে রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। 

সৈয়দপুর জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদ উন নবী জানান, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সৈয়দপুরে তিন কিলোমিটার রেলপথে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

সৈয়দপুর বণিক সমিতির সভাপতি মো. ইদ্রিস আলী বলেন, কার অনুমতি নিয়ে বাঁশবাজার গড়ে উঠেছে, তা জানা নেই। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের বাজার হওয়া ঠিক নয়। বাঁশ ব্যবসায়ী আকরাম আলী বলেন, পৌরসভাকে টোল দিয়ে আমরা বাঁশের ব্যবসা করছি। আমাদের কেউ বাঁধা দেয়নি। সরিয়ে দেওয়া হলে অন্যত্র চলে যাব।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ি জানান, প্রতিদিন দোকানদারদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়। টাকাগুলো রেলওয়ের কতিপয় লোকের কাছে যায়। তারা কি করে আমার তা জানা নেই।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক ওবায়দুল ইসলাম বলেন, রেললাইন দখল করে দোকান। প্রতিদিন তাদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন। যারা এ সকল অবৈধ কাজের সাথে জড়িত তাদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে এসে শাস্তির দাবি করছি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে