জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবন চত্বর। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বেলা ১২টার পর থেকে এনবিআর ভবনের দুই গেট বন্ধ করে রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এতে কেউ ভবনে ঢুকতে বা বের হতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা জানিয়েছেন, তাদের প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। পরিষদের সভাপতি অতিরিক্ত কমিশনার হাসান মুহম্মদ তারেক রিকাবদারসহ নেতাদেরকে ভবনে ঢুকতে না দিয়ে বলা হচ্ছে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। তবে এ আলোচনার জন্য আন্দোলনকারী প্রতিনিধিদের ডাক না দিয়ে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের এমন সব ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যারা সরাসরি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
অবস্থানে থাকা এনবিআর কর্মকর্তা হাসান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছি, কোনো দাঙ্গা করছি না। অথচ আমাকে আমার অফিসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।” তিনি জানান, অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তারা বরাবরই ইতিবাচক। তবে প্রকৃত আলোচনার সুযোগ না দিলে তা ফলপ্রসূ হবে না।
তিনি অভিযোগ করেন, ২০ মে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় তাদের ১৩ জন প্রতিনিধি অংশ নিলেও মাত্র ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। অথচ আলোচনা শেষে উপদেষ্টা এটিকে ফলপ্রসূ দাবি করেন, যা প্রকৃতপক্ষে ভুল ব্যাখ্যা।
ঐক্য পরিষদের নেতারা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো আলোচনাই ফলপ্রসূ হবে না। তারা অভিযোগ করেন, এই চেয়ারম্যান সরকারের ‘ফ্যাসিস্ট এজেন্ডা’ বাস্তবায়নের সহযোগী। তাদের মতে, সরকার ঘোষিত এনবিআর সংস্কার কার্যত প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের সূচনা, যা একটি স্বাধীন ও স্বচ্ছ রাজস্ব ব্যবস্থার পরিপন্থী।
চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এনবিআরের প্রবেশপথে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সেনা ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে সেবা প্রত্যাশী, সাংবাদিক ও কর্মকর্তারা কেউই ভবনে প্রবেশ বা বের হতে পারেননি।
সেখানে অবস্থানরত আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা বলছেন, এনবিআরের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের একত্রিত হওয়া ঠেকাতে এবং দাবি আদায়ে বাধা দিতেই এনবিআর ভবন কার্যত অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে।
গত ১২ মে সরকার এনবিআরকে দুটি ভাগে বিভক্ত করার একটি অধ্যাদেশ জারি করে। এর প্রতিবাদে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২৬ মে পর্যন্ত কলমবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এনবিআরকে বিলুপ্ত করা হচ্ছে না, বরং এটিকে একটি স্বাধীন ও বিশেষায়িত বিভাগে রূপান্তর করা হবে। এরপর সাময়িকভাবে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলেও, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে ‘সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
এই ধারাবাহিকতায় বুধবার (২৫ জুন) ঐক্য পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়, শুক্রবার (২৭ জুন) মধ্যে দাবি না মানা হলে শনিবার (২৮ জুন) থেকে লাগাতার শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হবে। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেল ৫টায় বিসিএস (কর) ও সিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। তবে আন্দোলনরত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো নেতাকে এই আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ফলে তারা আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন না।
এদিনও সকাল ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলমবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস দপ্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে।