আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবার একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো। সেইসাথে সরকার ও নির্বাচন কমিশনও দেশবাসীকে ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার কথা বলছে।
অপরদিকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের সময় নির্ধারণের ইঙ্গিত দিয়েছেন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। যদিও সরকার পতনের পর থেকেই রাজনীতির মাঠে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মাঝে বেশ আগ্রহ রয়েছে। তবে গত কয়েকমাস ধরে সংসদীয় এলাকায় নির্বাচনী হাওয়া অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্ভ্রাব্য প্রার্থীদের পদচারণাও বেড়েছে সংসদীয় এলাকাগুলোতে এখন পুরোদমে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
বরিশাল জেলার ছয়টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের পদচারনায় নির্বাচনী এলাকাগুলোতে নির্বাচনের আমেজ বইতে শুরু করেছে। এরমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনটি দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিএনপির হাত ছাড়া হওয়া সেই দুর্গ ফিরে পেতে বিএনপির সম্ভ্রাব্য প্রার্থীরা যখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন, ঠিক সেই সময় এ আসনে ভাগ বসাতে গত প্রায় ছয় মাস পূর্বে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় সংসদের ১১৯ নম্বর আসন বরিশাল-১ এর নির্বাচনী এলাকার শুধু গৌরনদী উপজেলায় সম্ভ্রাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন তিনজন নেতা। পাশাপাশি এ আসনের আগৈলঝাড়া উপজেলায় রয়েছেন মাত্র একজন সম্ভ্রাব্য প্রার্থী। তিনি হলেন, বিগত ওয়ান ইলেভেন থেকে শুরু করে দলের দুর্দীনে স্থানীয় নেতাকর্মীদের একমাত্র কান্ডারী হিসেবে পরিচিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান।
গৌরনদী উপজেলার প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন-এ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
সূত্রমতে, বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হচ্ছে বরিশাল-১ আসনের আগৈলঝাড়া উপজেলা। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে এ আসনের সবদলের প্রার্থীদের কাছে তাই আগৈলঝাড়া উপজেলার ভোটাররাই হচ্ছেন বড় ফ্যাক্ট। যে কারণে ত্রয়োদশ নির্বাচনে আগৈলঝাড়া উপজেলার একমাত্র প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ ইউনিট থেকে শুরু করে সবধর্মের সাধারণ জনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহানকে সমর্থন দিয়েছেন। এর বাহিরে বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকে বিএনপির চরম দুর্দীনে ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করায় সেখানেও (গৌরনদী) রয়েছে তার বিশাল একটি ভোট ব্যাঙ্ক।
বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের সময়ে একাধিকবার হামলা, মামলা ও কারাভোগ করেও দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে মাঠে সরব উপস্থিত থেকে দলীয় কর্মসূচি পালন করা ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। ওইসময় এ আসনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা এবং নিজ দলের নেতার মামলা দায়েরের কারণে মাত্র সাতদিন নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগ করে তিনি (সোবহান) ৭০ হাজার ৯৬৯ ভোট পেয়েছিলেন। বিএনপির চার নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় এ আসনে প্রায় ছয়মাস পূর্বে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ মাওলানা কামরুল ইসলাম খান দলের মনোনীত প্রার্থী হওয়ায় নিয়মিত তিনি দলীয় কর্মকান্ডের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী মাঠে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে এখন পর্যন্ত এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্য কোনো দলের সম্ভ্রাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা দেখা যায়নি।