ক্লিনিকের পরিচালককে দুই লাখ টাকা জরিমানা

টাকা না পেয়ে অসুস্থ্য কিশোরীর অপারেশন স্থগিত

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : | প্রকাশ: ২৭ জুন, ২০২৫, ০৪:২৬ পিএম
টাকা না পেয়ে অসুস্থ্য কিশোরীর অপারেশন স্থগিত

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বেসরকারি মৌরি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে চরম অবহেলায় ১৩ বছর বয়সের এক কিশোরীর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পরেছে। অভিযোগ উঠেছে, রোগীর জরুরি অপারেশনের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্বেও স্বজনদের থেকে নির্ধারিত ১০ হাজার টাকা আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে অসুস্থ্য ওই কিশোরীকে চিকিৎসা না দিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।

পরবর্তীতে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিবাগত রাতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাজিব হোসেনের নেতৃত্বে ওই ক্লিনিকে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে মৌরি ক্লিনিকের পরিচালক মাহমুদ হোসেন মুহিত শরীফকে দুই লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের রায় ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করায় ক্লিনিকের পরিচালককে সতর্ক করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী কিশোরী ফাতেমা আক্তারের বাবা গৌরনদী উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার জানান, সোমবার (২৩ জুন) হঠাৎ পেটে তীব্র ব্যাথা অনুভব হলে ফাতেমাকে মৌরি ক্লিনিকে আনার পর চিকিৎসকেরা তাকে অ্যাপেন্ডিসাইটিস শনাক্ত করে দ্রুত অপারেশনের পরামর্শ দেন। এরপর গত দুইদিন ওই ক্লিনিকে ফামেতাকে ভর্তি রাখা হয়।

ফাতেমার মা রাজিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে অপারেশনের পূর্বে তাদের কাছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। এসময় আমি একটু টাকা কমানোর দাবি করে অপারেশন করার অনুরোধ করি। একে ক্ষিপ্ত হয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আমার অসুস্থ্য মেয়ের অপারেশন না করেই বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে খুব কষ্ট পাচ্ছিল। আমরা টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ টাকা কমানেরা কথা শুনেই কোন সময় না দিয়ে তড়িঘড়ি করে আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় চিকিৎসা না পেয়ে আমার অসুস্থ্য মেয়ের জীবন এখন চরম বিপন্ন। পরে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে মৌরি ক্লিনিকের পরিচালক ও গৌরনদী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহমুদ হোসেন মুহিত শরীফ বলেন, ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফদের ভুলের খেসারত আমাকে দিতে হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে সেজন্য সকল স্টাফদের সর্তক করা হয়েছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাজিব হোসেন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে নয়টার দিকে ওই ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ক্লিনিক মালিককে দুই লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদন্ডের রায় প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তীতে জরিমানার টাকা পরিশোধ করায় ক্লিনিক মালিককে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে