শৈলকুপায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে : ভ্যাকসিনের সংকট

এফএনএস (মফিজুল ইসলাম; শৈলকুপা, ঝিনাইদহ) : | প্রকাশ: ২৯ জুন, ২০২৫, ০৪:০২ পিএম
শৈলকুপায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে : ভ্যাকসিনের সংকট

ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলায় গবাদি পশুর মরণব্যাধি লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ  ভয়াাবহ রূপ ধারণ করায়   খামারিদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এই ভাইরাসজনিত চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে  ইতি মধ্যে শতশত গরু অসুস্থ হচ্ছে, আর খামারিরা দেখছেন সর্বনাশের অশনি সংকেত। এমন এক বিপর্যয়কর মুহূর্তে দ্রুত ভ্যাকসিন   প্রয়োজন হলেও  তীব্র সংকট দেখা  দিয়েছে।

এলএসডি, এক নীরব ঘাতক সিনিয়র ভেটেরিনারিয়ান মেজর (অব.) ডা. মুহাম্মদ মেহেরুল হাসান এই পরিস্থিতিকে 'উদ্বেগের কারণ' হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এলএসডি গরুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এটি খামারিদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে। তিনি আক্রান্ত গরুর যে বিভীষিকাময় লক্ষণগুলো তুলে ধরেন, তা রীতিমতো গা শিউরে ওঠার মতো। গরুর শরীরের তাপমাত্রা ১০৫-১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট হবে। খাবারে অরুচি ও দুর্বলতা: জ্বর আর যন্ত্রণায় গরু খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিবে, ফলে দ্রতই হয়ে পড়বে কঙ্কালসার। ভয়াবহ ক্ষত ও পিন্ড: মাথা, ঘাঢ়, পা, ওলান এবং যৌনাঙ্গসহ সারা শরীরে চামড়া ফুলে পিন্ড বা ফোসকা তৈরি হবে, লোম উঠে গিয়ে দগদগে ক্ষত সৃষ্টি হবে। এই পিন্ডগুলো এতটাই বেদনাদায়ক যে গরু নড়াচড়াও করতে পারবে না। অন্ধত্ব ও অসহায়ত্ব: চোখ, নাক ও মুখ দিয়ে অনবরত পানি ও লালা ঝরবে, অনেক সময় গরুর চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। পায়ে ফোলা ও পুঁজ রক্ত বের হতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে।

তবে এই পক্স ভাইরাস মূলত মশা, মাছি ও অন্যান্য রক্তচোষা কীটপতঙ্গের মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়া আক্রান্ত গরুর লালা, দূষিত সরঞ্জাম, এমনকি আক্রান্ত ষাঁড়ের বীজ এবং গাভীর দুধের মাধ্যমেও এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদিও এই রোগের মৃত্যুহার কম বলা হলেও গত বছর থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক বাছুর মারা গেছে। এছাড়া আক্রান্ত পশু এতটাই দুর্বল ও শীর্ণ হয়ে যায় যে এর উৎপাদন ক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যায়, যা খামারিদের পথে বসিয়ে দেয়। এ রোগে আক্রান্ত পশুর চামড়ার মানও কমে যায়।


ধলহরা চন্দ্র গ্রামের পরীক্ষিত কুমার কুন্ডু, আলিম মিয়া ক্ষোভের সাথে অভিযোগ করে বলেন, যখন তাদের চোখের সামনে গরুগুলো প্রতিবছরই ধুঁকে ধুঁকে মরছে, যখন একটি ভ্যাকসিনের জন্য তারা হাহাকার করছেন, ঠিক তখনই পিজি (প্রোডিউসার গ্রুপ) সদস্যদের ১৯টি গ্রুপের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকার চেয়ার-টেবিল এবং ৭০০ ডেইরি সদস্যের জন্য অ্যালুমিনিয়ামের বড় আকারের হাইজেনিক ক্যান বিতরণ করা হয়েছে! তাদের প্রশ্ন, "এই টাকা দিয়ে যদি এলএসডি রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হতো, তাহলে কি খামারিরা এত বিপদে পড়তেন? যদিও গত ফেব্রুয়ারী মাসে শৈলকুপায় এসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেস্টা ফরিদা আখতার  খামারীদের অনেক আশ্বাস  দিয়েছিলেন”।  

এই ঘটনা স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে, মাঠ পর্যাযের বাস্তবতা এবং খামারিদের প্রকৃত চাহিদা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা কতটা প্রকট। যখন একটি মহামারির মতো রোগ কৃষকদের জীবিকা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে, তখন এ সকল সামগ্রী বিতরণে সরকারি অর্থ ব্যয় করা চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয়। প্রশ্নবিদ্ধ সরকারের অগ্রাধিকার:-শৈলকুপার কৃষকরা এখন দিশেহারা। একদিকে এলএসডি'র তান্ডব, অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা তাদের ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে  দিয়েছে। সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকা নিয়ে  প্রশ্ন উঠেছে - জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন নাকি বিলাসী চেয়ার-টেবিল? এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রাসেল আহমেদ জানান , প্রতিদিনই হাসপাতালে ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হয়ে বাচুর গরু বেশি আসছে। আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা ও পরামর্শ দিচ্ছি। তবে ভ্যাকসিন সংকট থাকার কথা স্বীকার করে বলেন বাইরে থেকে ভ্যাকসিন গুলো কিনে নিয়ে গরুর দেওয়ার জন্য  খামারিদের  পরামর্শ দিচ্ছি। তবে

বিশেষজ্ঞদের মত  এই মুহূর্তে ঝিনাইদহের শৈলকুপাসহ দেশের প্রতিটি প্রান্তে এলএসডি মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম এবং আক্রান্ত পশুর সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। অন্যথায়, দেশের পশুপালন খাত এক ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়বে এবং এর দায়ভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, তা না হলে এই নীরব ঘাতক শুধু গরুর জীবন নয়, হাজারো খামারির স্বপ্ন ও জীবিকাও কেড়ে নেবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে