জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষত আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে এই সঙ্কট থেকে উত্তরণে রোববার (২৯ জুন) বিকেলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা। সচিবালয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক চলমান অচলাবস্থা নিরসনের উদ্দেশ্যে সরকারের সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারক মহলে আয়োজিত প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, আইসিসিবির সহসভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমান, মেট্রো চেম্বারের সহসভাপতি ও ট্রান্সকম গ্রুপের গ্রুপ সিইও সিমিন রহমান এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ। এ বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানও উপস্থিত ছিলেন।
এনবিআর সংস্কার ইস্যুতে ব্যবসায়ী নেতারা বৈঠকের আগে গণমাধ্যমকে জানান, কাস্টমস কার্যক্রমে অচলাবস্থার কারণে দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রবলভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের বৈদেশিক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট তৈরি হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে, রোববার (২৯ জুন) সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, জাতীয় স্বার্থে অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি এবং বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য এনবিআরের আওতাধীন সব কাস্টম হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর সব স্তরের চাকরিকে ‘অত্যাবশ্যকীয় সেবা’ হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে আহ্বান জানিয়ে সরকার বলেছে, কাজে যোগ না দিলে দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব খাত সংস্কারের উদ্যোগের পর থেকে এনবিআরের অভ্যন্তরে বিরোধ দেখা দেয়। সরকার গত ১২ মে এক অধ্যাদেশ জারি করে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ এবং ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে দুটি পৃথক বিভাগ গঠন করে। উদ্দেশ্য ছিল কর নীতি প্রণয়ন এবং কর আদায়ের কাজকে আলাদা করা। তবে এনবিআরের কর্মকর্তারা এই পরিবর্তনে তেমন আপত্তি না করলেও, পদায়নের ক্ষেত্রে নিজেদের অগ্রাধিকার দাবি করছেন। এ নিয়ে চলমান অস্থিরতা এখন রাজস্ব খাতের কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন অচলাবস্থা দেশের রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতিতে রাজস্ব খাতে স্থবিরতা বিনিয়োগ ও বাণিজ্য পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এমন প্রেক্ষাপটে অর্থ উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ীদের এ বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।