জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ/৯৮ এ জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হলেও ২৭ বছর যাবত সেই পুরস্কার পায়নি প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রশিদ ভুইয়া। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস এ পুরস্কারের জন্য ডাকেন সে আশায় অপেক্ষায় আছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার আগরপাট্টা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ রশিদ ভুইয়া। পুরস্কারের অপেক্ষায় থাকাবস্থায় ইতোমধ্যে শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন বয়োবৃদ্ধ এমএ রশিদ ভূঁইয়া। ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুর আগে জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন পুরস্কারটি হাতে পেলে স্বস্থির নিঃশ্বাস নিতে পারতেন তিনি। শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের পদক ও পুরস্কারের সেই চিঠিটি হাতে নিয়ে এখনও কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মিলছে না কাঙিত পুরস্কারটি। জানা গেছে, ময়মনসিংহ জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমীর পরিচালক ড. মোঃ আনোয়ারুল আজিজ স্বাক্ষরিত পত্রের স্মারক নং-নেপ/ময়/সা:শাঃ/শি: সপ্তাহ/খ১৫/৯৮/১৫০/৪ ৫ তারিখ ১৪/০৫/৯৮ ইং কিশোরগঞ্জ জেলার নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও পাকুন্দিয়া উপজেলার আগরপাট্টা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রশিদ ভূঁইয়াকে ঢাকাস্থ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ১৮ জুন/৯৮ ইং তারিখে যোগদান করে তৎকালীন সরকার প্রধানের নিকট থেকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের পদক. সনদ ও নগদ পুরস্কার গ্রহণের জন্য বলা হয়। চিঠি পেয়ে তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় অবস্থান করলেও সেই তারিখে তৎকালীন বিরোধীদল বিএনপির হরতাল আহবান করায় অনুষ্ঠানটি বাতিল হয়ে যায়। পরে ১৯৯৯ সালের ২ জানুয়ারী নেপ ময়মনসিংহের পরিচালক ড. মোঃ আনোয়ারুল আজিজ স্বাক্ষরিত পত্র নং-১৮৯৩/জাঃ প্রাঃ শিঃসঃ/৯৮/নেপ/হিঃ (৬) তাং ২/১/৯৯ পত্রমূলে আইএফআইসি ব্যাংক ময়মনসিংহ শাখার চেক নং-৬০০৪৩৪৬ তাং-২/২/৯৯ মূলে ২ হাজার টাকার একটি চেক তাঁর নামে পাঠিয়ে দেন। যা পাকুন্দিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে তিনি সংগ্রহ করেন। সনদ, পদক ও পুরস্কারের জন্য অনেক বছর অতিবাহিত হলেও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আর কোন সাড়া না পেয়ে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পর কেবলমাত্র সনদটি পান। পুরস্কার ও পদকটি এখন পর্যন্তও পাননি। আদৌ পদকটি পাওয়া যাবে কী? এ প্রশ্ন এখন ওই শিক্ষকের। এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ শিক্ষক আগরপাট্টা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক এম এ রশিদ ভুইয়ার বাড়িতে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালের ১৮ জুন আমি পদকটি আনার জন্য ঢাকা অবস্থান করলেও সেদিন তৎকালীন বিরোধীদলের ডাকা দেশব্যাপী হরতালের কারণে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে আমার শ্রেষ্ঠত্বের পদক ও পুরস্কারটি নিতে পারিনি। বর্তমানে শিক্ষা বান্ধব নোবেল বিজয়ী সরকার প্রধান ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস সাহেব দায়িত্বে রয়েছেন, আশা করি তিনি আমার কাঙিত পুরস্কারটি প্রদানের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। আমি মিডিয়ার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। খোঁজ নিতে ওই শিক্ষকের সাথে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমি বিছানায় অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী রয়েছি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এই বয়োবৃদ্ধ সময়ে সেই কাঙিত পুরস্কারটি পেলে আমার ২৭ বছরের অপেক্ষার অবসান হতো। প্রসঙ্গত এম এ রশিদ ভুইয়া ১৯৪১ সালে পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের আগরপাট্রা গ্রামের প্রয়াত মোহাম্মদ আলী ভুইয়া ও মরহুমা আয়শা খাতুনের পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে চরদেও কান্দী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৯৮ সালের ৩১ আগষ্ট আগরপাট্টা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করে অবসর নেন। তিনি জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও সুনামের সাথে পালন করেছেন। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫৫ সালের অর্ধ সাপ্তাহিক পাকিস্তান পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। এছাড়াও দৈনিক নাজাত (১৯৫৮), দৈনিক পয়গাম (১৯৬৫), দৈনিক আজাদ (১৯৭০), বাংলা বাজার (১৯৭১) থানা ও মহকুমা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯৪ সাল থেকে কিশোরগঞ্জ থেকে প্রকাশিত কাজী শাহীন খান সম্পাদিত জেলার প্রথম দৈনিক আজকের দেশ এ স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে শুরু থেকে অদ্যবধি কাজ করছেন। তিনি ২০১২ সাল থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেন। সত্যের দিশারী পতিতযশা সাংবাদিক রশিদ ভুইয়া অনেক বাঁধা বিপত্তিকে ডিঙ্গিয়ে 'সত্যের মুখোমুখি প্রতিদিন' এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আজও সাংবাদিকতার মহান দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ১৯৬৬ সালে কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাব গঠনকালে তিনি প্রতিষ্ঠাতা সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ফলে ২০১৭ সালে কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে তাঁকে সম্মান সুচকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে সম্মাননা ও ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়। এছাড়াও জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সম্মাননা ক্রেস্টও পেয়েছেন।