গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজকে এলাকার একটি হত্যা কাণ্ডের সাথে জড়িয়ে ফেইসবুকে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২ জুলাই বুধবার বিকালে ফকির মজনু শাহ্ সেতু'র পশ্চিম প্রান্ত থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় চত্বরে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে শাহ্ রিয়াজুল হান্নানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে অপপ্রচার বন্ধের আহ্বান জানান। এসময় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা, বিএনপি নেতা আব্দুল করিম বেপারী, জেলা বিএনপি নেতা আফজাল হোসাইন, আজগর হোসেন খান, জেলা মহিলা দলের সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসী, উপজেলা বিএনপি নেতা ও কাপাসিয়া প্রেসক্লাব সভাপতি এফ এম কামাল হোসেন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফরিদুল আলম বুলু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোঃ ফরিদ শেখ, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন শিশির, শ্রমিক দলের সভাপতি মোশারফ হোসেন, বিএনপি নেতা সোলায়মান মোল্লা, মতিউর রহমান জাফর, আরিফুর রহমান সোহাগ বেপারী প্রমুখ।
এর আগে শাহ্ রিয়াজুল হান্নানকে জড়িয়ে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কাপাসিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়রি এবং বুধবার দুপুরে গাজীপুর প্রেসক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গাজীপুরের কাপাসিয়ার কড়িহাতা ইউনিয়নের বেহাইদুয়ার গ্রামের মাদকসেবী ও সন্ত্রাসী মোঃ নাঈমের (২৪) অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে লোকজন মঙ্গলবার দুপুরে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। সে ওই গ্রামের মাদক বিক্রেতা মোঃ নাজিম উদ্দিনের ছেলে।
নিহত নাঈমের প্রতিবেশি চাচী ফেরদৌসি বেগম জানান, প্রায় দুই মাস আগে গভীর রাতে তার ছেলে সোহেল রানা (৩৫) স্থানীয় আড়াল বাজার থেকে বাড়ি ফিরার পথে মোঃ নাঈম ও তার ভাই মোঃ কাইয়ুম কিছু টাকা দাবি করলে তা না দেওয়ায় তাকে এলোপাথারি কুপিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেন। এ ঘটনায় তার মেয়ে রুমানা সানী একটি মামলা করলে নাঈমের পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছে। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর গত রোববার সোহেল বাড়ি ফিরলে মঙ্গলবার দুপুরে নাঈম একটি চাপাতি নিয়ে সোহেলের বাড়িতে গিয়ে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। এ সময় সে ঘরের দরজা বন্ধ করে আশপাশের লোকজন ও স্বজনদের ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায়। পরে স্থানীয় শতাধিক লোক নাঈমকে ঘেরাও করে গণপিটুনি দেয়। এক পর্যায়ে সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
ঘটনাস্থলের পাশ্ববর্তী মুদি দোকানী মোঃ রবিউল জানান, নাঈম ও তার ভাই কাইয়ুম এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি। তারা প্রায় রাতেই এলাকার বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা ছিনতাই করত। তাছাড়া যে কোন বিষয়ে ঝামেলা হলেই তারা দা, ছুরি ও চাপাতি দিয়ে লোকজনকে কুপিয়ে আহত করত।
একই গ্রামের সৌদি প্রবাসী মোঃ আল আমীন জানান, প্রায় এক বছর আগে তিনি ছুটিতে দেশে আসলে নাঈম তার এনড্রয়েড মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বহু দেন দরবার করেও তা উদ্ধার করতে তিনি ব্যর্থ হন।
ওই গ্রামের আসাদ শেখ জানান, নাঈম ও তার ভাই কাইয়ুম বহু মানুষকে বাড়িতে এনে জিম্মি করে টাকা আদায় করতো। তাদের নামে কাপাসিয়া ও আশপাশের বিভিন্ন থানায় বহু মামলা চলমান রয়েছে। তাই এলাকার লোকজন তাদের অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে গণপিটুনি দিয়ে নাঈমকে হত্যা করেছে।
নাঈমের বাড়িতে পরিবারের লোকজন না থাকায় এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, দুই পক্ষের মারামারির ঘটনার জেরে এলাকার লোকজন জরো হয়ে নাঈমকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে তিনি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন। নাঈমের নামে কাপাসিয়া থানায় ৮টি মামলা রয়েছে বলেও জানা যায়। নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিহতের মা মমতাজ বেগম বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০/১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।