অন্তর্বর্তী সরকারের ‘ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’ কর্মসূচি বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ৩ জুলাই, ২০২৫, ০২:৪২ পিএম | প্রকাশ: ৩ জুলাই, ২০২৫, ০২:৩১ পিএম
অন্তর্বর্তী সরকারের ‘ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’ কর্মসূচি বাতিল

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মরণে আয়োজন করা অন্তর্বর্তী সরকারের ‘জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা’ থেকে বাতিল করা হয়েছে বহুল আলোচিত ‘এক মিনিট ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’ কর্মসূচি। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ ভেরিফায়েড আইডিতে দেওয়া পোস্টে এই তথ্য জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি জাগ্রত রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছর ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। এর অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ১৮ জুলাই সারা দেশে এক মিনিটের জন্য মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। মূলত ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই রাত ৯টায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের হঠাৎ দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদেই এই প্রতীকী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। তবে সেই সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

সমালোচকরা মনে করছেন, এমন কর্মসূচি অর্থহীন এবং এটি দেশের সংবিধান, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত চুক্তি (আইসিসিপিআর), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন এবং সদ্য প্রণীত সাইবার সিকিউরিটি অধ্যাদেশের সরাসরি লঙ্ঘন হতে পারে। সাবেক ফেসবুক কর্মকর্তা সাবহানাজ রশীদ দিয়া তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, তিনি ‘একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেছেন’ যে এমন প্রস্তাব আলোচনার টেবিলেই উঠতে পারে। তাঁর আশঙ্কা, এটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে, যা ভবিষ্যতে কোনো সরকারকে অযৌক্তিক ও আইনবহির্ভূতভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করার সুযোগ করে দিতে পারে। বরং তাঁর প্রস্তাব, ওই দিন ইন্টারনেট ফ্রি করে দেওয়া হোক।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও অনেকে এই সিদ্ধান্তকে ‘সস্তা চিন্তা’ বলে অভিহিত করেছেন। কেউ কেউ পুরো জুলাই মাসই ইন্টারনেট বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। মাসুম তালুকদার নামের একজন লিখেছেন, ‘এক মিনিট ইন্টারনেট বন্ধ না রেখে পুরো জুলাই মাসে ইন্টারনেট ফ্রি করে দেওয়া উচিত ছিল।’ মো. আসিফ উর রহমান লিখেছেন, ‘১৮ জুলাই সারা দিন ফ্রি আনলিমিটেড নেট দিলে সবাই খুশি হতো। অবাধ স্বাধীনতা ফিল হতো। ইন্টারনেট অফ করার এসব বুদ্ধি কার মাথা থেকে বের হয়? ওই সময় যদি কারও ইমার্জেন্সি কোনো ট্রানজেকশন অফ হয়ে যায়? ফ্রিল্যান্সারদের সমস্যা হয়?’

এই সমালোচনার প্রেক্ষিতেই শেষ পর্যন্ত কর্মসূচিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফেসবুক পোস্টে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন, ‘জুলাই কোমেমোরেশন প্রোগ্রামের একটি কর্মসূচি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা পর্যায় থেকেই দ্বিধা ছিল। একটি মাত্র কর্মসূচি আমরা একাধিকবার বাদ দিয়েছি, আবার যুক্ত করেছি। আমরা অনেকেই একমত ছিলাম, “এক মিনিট ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট” সম্ভবত তেমন ভালো আইডিয়া নয়। পরে নানা আলোচনার পর আবারও কর্মসূচির মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। বড় কোনো কর্মসূচি এবং বড় একটি দল একসাথে কাজ করলে মাঝে মাঝে এমন কিছু ভুল চোখের আড়ালে থেকে যায়।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আমাদের নিজেদের মধ্যে দ্রুত সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে—এক মিনিট প্রতীকী ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি থাকছে না। সংশোধিত স্লাইড শেয়ার করা হয়েছে। এর বাইরে সব কর্মসূচি অপরিবর্তিত থাকছে। লেটস রিকানেক্ট, রিগ্রুপ অ্যান্ড রিইগনাইট দ্য ভেরি জুলাই ফায়ার।’

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময় ১৭ জুলাই (বুধবার) রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকে ১০ দিন, আর সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ থাকে টানা পাঁচ দিন। সেই সময় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও ছিল বন্ধ। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই নতুন সরকার প্রতীকীভাবে ব্ল্যাকআউটের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু গণবিরোধী মনোভাবের অভিযোগ ও নাগরিক উদ্বেগের মুখে সেই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাতিল করতে হলো।

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ‘জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা’য় অন্য সব কর্মসূচি নির্ধারিত সময়েই চলবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে