সুযোগের জায়গায় পৌঁছেছি, হারানো যাবে না এই সম্ভাবনা: আলী রীয়াজ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৩ জুলাই, ২০২৫, ০২:৫৩ পিএম
সুযোগের জায়গায় পৌঁছেছি, হারানো যাবে না এই সম্ভাবনা: আলী রীয়াজ

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ চলছে। রাষ্ট্রের কাঠামো, নীতি এবং সাংবিধানিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এই আলোচনাই নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনা ও গণতান্ত্রিক সংস্কারের দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শুরু হয় দ্বিতীয় দফার অষ্টম দিনের এই বৈঠক।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন। বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, অনেক প্রাণের বিনিময়ে, অনেক অত্যাচার-নিপীড়নের পরে আমরা আজ একটি সম্ভাবনার জায়গায় এসে পৌঁছেছি। এই সুযোগ হেলায় হারানো যাবে না। তিনি বলেন, রাষ্ট্র গঠনের যে নতুন সুযোগ এসেছে, তা ৫৩ বছরে আর দেখা যায়নি। তাই এই আলোচনাকে ফলপ্রসূ করতে হবে।

এদিনের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের সীমা ও শর্তাবলী, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধিবিধান। আলী রীয়াজ জানান, এ তিনটি বিষয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবের অংশ। তবে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, সেগুলো নিয়েই এই বৈঠকে নতুন করে কথা হচ্ছে। তার ভাষায়, আলোচনা ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং এভাবে এগোতে পারলে জুলাই মাসের মধ্যেই ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা সম্ভব।

বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং আমার বাংলাদেশ পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ আব্দুল্লাহসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।

এর আগে, ২ জুলাই অনুষ্ঠিত বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়। কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের চলমান কার্যক্রম এবং সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আশু পদক্ষেপের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা বিশ্বাস করেন, সংলাপের মধ্য দিয়েই সমাধান সম্ভব। অধ্যাপক আলী রীয়াজের মতে, পূর্ববর্তী সংলাপে যে সব বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে, সেগুলো সমাধান করে জাতিকে একটি নতুন রাজনৈতিক চুক্তির পথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটি স্থিতিশীল ও গ্রহণযোগ্য কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। সবার আশা, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিভাজন কাটিয়ে একটি টেকসই ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে দেশ।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে