ত্রাণ নিতে এসে প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা, গাজায় মৃত্যু মিছিল থামছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৩ জুলাই, ২০২৫, ০৩:২৭ পিএম
ত্রাণ নিতে এসে প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা, গাজায় মৃত্যু মিছিল থামছে না

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলমান থাকার পরও ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত হামলায় মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করছে। বুধবার (২ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এবং বিবিসি জানায়, ওই দিন মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ১১১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন নারী, শিশু এবং ত্রাণের জন্য অপেক্ষমাণ সাধারণ মানুষ।

বিশেষভাবে নজরকাড়া ঘটনা ঘটে গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালকের বাড়িতে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বিমান হামলা চালায় হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মারওয়ান আল সুলতানের বাসভবনে। এতে নিহত হন তিনি নিজে, তার স্ত্রী ও এক কন্যা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চিকিৎসক মারওয়ান দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা পেশায় যুক্ত ছিলেন এবং মানবিকতা ও সহমর্মিতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। হামলার নিন্দা জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, চিকিৎসাকর্মীদের ওপর এমন হামলা জঘন্য অপরাধ। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা হামাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। যদিও নিহত চিকিৎসক মারওয়ানের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি তারা।

গাজার খান ইউনিসের আল-মাওয়াসির এলাকায়, যেটিকে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ ঘোষণা করা হয়েছিল, সেখানে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাবারের জন্য অপেক্ষমাণ অবস্থায় আরও ২৪ জন ফিলিস্তিনি হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

অন্যদিকে গাজার উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম হাসপাতাল আল-শিফার কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে হাসপাতালের জ্বালানি ফুরিয়ে যাচ্ছে, ফলে শত শত রোগী মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার প্রায় ৮২ শতাংশ এলাকা হয় ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণে, নয়তো জবরদস্তিমূলক উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে রয়েছে। গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল জানান, নতুন করে বাস্তুচ্যুত মানুষ রাস্তায় তাঁবু খাটিয়ে বাস করছে, কোথাও ঠাঁই নেই।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের পরিসংখ্যানও ভয়াবহ। সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৭ হাজার ১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৩৪ হাজার ৫৯২ জন। এই বিপুল প্রাণহানি এবং ধ্বংস প্রমাণ করছে, গাজায় চলমান যুদ্ধ এক ভয়াবহ মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রতিদিনের এই সহিংসতা বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে, তবে সহিংসতা বন্ধে কার্যকর কোনো কূটনৈতিক পদক্ষেপ এখনো দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বাস্তবে গাজাবাসীদের দুর্দশা লাঘবে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আসেনি। গাজার বিধ্বস্ত জনগণ এখনও বিশ্ব বিবেকের জবাবের অপেক্ষায়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে