খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে বিভাগের ১০ জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১৭ জন। এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫৭ জন। অনেক রোগীর শরীরে দেখা দিচ্ছে নতুন উপসর্গও। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব বলছে, গত বছর খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের বেশি, আর প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫ জন।
প্রতি বছর আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণের মৌসুম ধরা হলেও এ বছর জুন-জুলাই মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন নতুন নতুন রোগী।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী তানজিলা আক্তার বলেন, ‘জ্বর হওয়ার পর শরীর কাঁপতে থাকে, তারপর বমি শুরু হয়। ডাক্তাররা বলেছেন, ডেঙ্গু। আগে কখনো এমন হয়নি।’
বাগেরহাটের শরণখোলা থেকে তিনদিন আগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন সোলাইমান মিয়া। তার বোন বলেন, ‘বড় ভাই ক্ষেত খামারে কাজ করেন, হয়তো সেখান থেকে মশার কামড়ে ডেঙ্গু হতে পারে। প্রথমে তাকে শরণখোলা উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম, জ্বর না কমায় পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে খুলনায় নিয়ে আসি।’ আরেক রোগীর স্বজন রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। আলাদা ব্যবস্থা না থাকলে সবার জন্যই রিস্ক।’
চিকিৎসকদের ভাষ্য, এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে জ্বরের সঙ্গে ঝাঁকুনি, বমি, ও অতিরিক্ত দুর্বলতার উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি বরগুনাতে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। এই জেলায় এমন ডেঙ্গু সংক্রমণের কারণ হিসেবে সূত্র জানিয়েছে, বরগুনায় সংরক্ষিত বৃষ্টির পানি থেকেই ভয়াবহভাবে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। একই রকমভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের ৭ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ বৃষ্টির পানি ড্রাম, ডেগ, ট্যাংক বা অন্যান্য পাত্রে সংরক্ষণ করেন। এসব জায়গা সহজেই এডিস মশার প্রজননস্থলে পরিণত হচ্ছে। ফলে একই রকম ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনা বিভাগের এসব উপজেলার মানুষ।
এ বিষয়ে খুলনা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাড. বাবুল হাওলাদার বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার শঙ্কা থাকলেও সিটি করপোরেশনের কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। আগের তুলনায় আরও বেশি মশক নির্ধন কার্যক্রম জোরদার করার প্রয়োজন হলেও মনে হচ্ছে আগের থেকে আরও কমিয়ে ফেলেছে তারা। হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. কাজী দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর অন্য সময়ের থেকে আগেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে দেখা গেছে, এ বছর ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে নতুন লক্ষণও দেখা গেছে।’ ধারণা করা হচ্ছে, এটা ডেঙ্গু ওয়ান সেরোটাইপ। প্রতিটি সেরোটাইপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধুমাত্র লার্ভিসাইড স্প্রে করে পরিবর্তিত সেরোটাইপের কারণে কিন্তু সেভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। এ রকম পরিস্থিতিতে আমরা বলছি যে, সমন্বিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম প্রয়োজন এবং সেটা এখনই বলে জানান ড. কাজী দিদারুল ইসলাম।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. মজিবুর রহমান জানান, প্রতিটি জেলাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করতে এবং হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখতে।