কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারীকে ধর্ষণ এবং সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া চার জনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কুমিল্লার আমলি আদালত-১১ এর বিচারক মমিনুল হক পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় এই আদেশ দেন।
মামলার নথি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া চার আসামি হলেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাহেরচর গ্রামের মোহাম্মদ আলী সুমন, রমজান আলী, মো. অনিক এবং মো. আরিফ। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী সুমন মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে পরিচিত।
মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানিয়েছেন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় পুলিশের পক্ষ থেকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। শুনানি শেষে বিচারক প্রত্যেক আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ আশাবাদী, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে এবং পলাতক বাকি অভিযুক্তদেরও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
মামলার তদন্তের পেছনের ঘটনাপ্রবাহ অনুযায়ী, ২৬ জুন রাতে মুরাদনগর উপজেলার একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ফজর আলী নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ঘটনার সময় আশপাশের কিছু লোক সেখানে ছুটে এসে ফজর আলীকে আটক করে পিটুনি দেয়। একইসঙ্গে, স্থানীয় কয়েকজন যুবক ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে এবং সেই ভয়াবহ দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনায় শুক্রবার (২৭ জুন) ভুক্তভোগী নারী মুরাদনগর থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন, যেখানে ফজর আলীকে প্রধান আসামি করা হয়। ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাজধানীসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ফজর আলীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। ফজর আলী বর্তমানে পুলিশ পাহারায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পরে রবিবার (২৯ জুন) বিকেলে মোহাম্মদ আলী সুমন ও তার তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। ওই দিনই তাদের কুমিল্লা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) তাদের রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, যারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি, তারা পলাতক রয়েছে। তবে তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মুরাদনগরের এই ঘটনায় স্থানীয়ভাবে যেমন তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তেমনি সামাজিক মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে মামলার তদন্ত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে।